বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দিনে বিক্রি দেড় লাখ টাকার ভাপা

  •    
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:৪৫

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাপা পিঠার চাহিদা বেশি। শীতের এই সময়ে ভালো দোকানগুলোতে গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজার টাকার মতো ভাপা পিঠা বিক্রি হয়। খরচ বাদে আয় হয় ৮০০-৯০০ টাকার মতো। আর ছোট দোকানগুলোতে দৈনিক হাজার টাকার ‍বিক্রিতে আয় ৫০০-৬০০ টাকা।

দেশে শীতকাল মানে শুধু হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা নয়, বরং গরম চুলার পাশে বসে সদ্য নামানো ভাপ ওঠা পিঠা খাওয়ার সময়ও এটি।

নাগরিক ব্যস্ততায় ঘরে ঘরে মজার পিঠা খাওয়ার সেই উৎসব এখন ভাটার দিকে। তবে শহরে সেই আমেজ এখন পাওয়া যায় রাস্তার পাশের অস্থায়ী কিছু দোকানে। ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রি হয় এসব দোকানে। নানা পদের পিঠা না পেলেও হারিয়ে যাওয়া সময় ফিরে পেতে তাই এসব দোকানে ভিড় করেন সবাই।

মৌসুমি এ ব্যবসার পসারও কম নয়। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরেই বিভিন্ন মোড়ে রয়েছে ছোট-বড় এমন শতাধিক পিঠার দোকান।

বেচাবিক্রিও খারাপ নয়। ব্যবসায়ীদের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের এসব দোকানে প্রতিদিন শুধু ভাপাই বিক্রি হয় দেড় লাখ টাকার। চিতই বিক্রির পরিমাণ কিছুটা কম।

শহরে ঘুরে দেখা যায়, পৌর এলাকার পিঠার দোকান রয়েছে ১০০টির মতো। তাদের মধ্যে ৩৩টি দোকানের ব্যবসা রমরমা। বাকিগুলোর বিক্রিও খুব কম নয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাপা পিঠার চাহিদা বেশি। শীতের এই সময়ে ভালো দোকানগুলোতে গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজার টাকার মতো ভাপা পিঠা বিক্রি হয়। খরচ বাদে আয় হয় ৮০০-৯০০ টাকার মতো। আর ছোট দোকানগুলোতে দৈনিক হাজার টাকার ‍বিক্রিতে আয় ৫০০-৬০০ টাকা।

এসব দোকানের সবাই মৌসুমি ব্যবসায়ী। সারা বছর অন্য কাজ করলেও শীতে রাস্তার ধারে বসেন পিঠা নিয়ে। গত বছর করোনাভাইরাস মহামারিতে তাদের ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। এবার পরিস্থিতি অনেকটা অনুকূলে থাকায় অনেকেই ফের পিঠা বিক্রি শুরু করেছেন।

তারা জানান, গত বছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে পিঠার দোকান তেমন খুলতেই পারেননি। যে কয়টি খোলা হয়েছিল সেগুলোতেও তেমন আয় ছিল না। এর কারণ, এসব দোকান জমে ওঠে সন্ধ্যার পর, তবে করোনার সময় সন্ধ্যার পর কেউই দোকান খোলা রাখতে পারেননি। এ ছাড়া পিঠা তৈরির সরঞ্জামের দামও ছিল অনেক।

তাদের দাবি, পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও আগের অবস্থা ফেরেনি। প্রতি বছর গড়ে ২০০ ব্যবসায়ী থাকলেও, এবার অর্ধেকের মতো দোকান চলছে।

পৌর শহরের কাজীপাড়ার ইদ্রিস মিয়া বসেন কালীবাড়ি এলাকার ফুটপাতে। ৫ বছর ধরে প্রতি শীত মৌসুমে ভাপা পিঠা বিক্রি করেন তিনি। কাজীপাড়া, বণিকপাড়া ও কালীবাড়ি এলাকায় তার পিঠার সুনাম অনেক।

স্থানীয়রা জানান, ইদ্রিস মিয়ার পিঠা মানেই অন্য রকম স্বাদ। লাইন ধরে এখান থেকে পিঠা কেনেন তারা। দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে পিঠা খেতে আসেন। চালের গুঁড়া, নারকেল ও খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি ইদ্রিস মিয়ার ভাপা পিঠার পাশাপাশি ধনেপাতা ও বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে বিক্রি করেন চিতই পিঠা। তার প্রতিটি পিঠার দাম ২০ টাকা।

ইদ্রিস মিয়া জানান, তার দোকান চলে বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। তবে পিঠা বিক্রি জমে ওঠে বিকেল থেকেই। সন্ধ্যার পর ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে পিঠা খেতে আসেন। আবার অনেকে বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যান।

সড়ক বাজার এলাকার হাসেম মিয়া বিক্রি করেন দুই রকমের ভাপা পিঠা। মিষ্টির সঙ্গে তার কাছে ঝাল ভাপাও রয়েছে। দামও কম, ১০ টাকা।

তিনি জানান, অন্য সময় তিনি ওই স্থানেই কলা বিক্রি করেন। শীত মৌসুমে সকালে কলা আর বিকেলে বেচেন পিঠা।

হাসেম আরও জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে সড়ক বাজার এলাকায় প্রতি শীতে পিঠা বিক্রি করে আসছেন তিনি। প্রতিদিন ২০ কেজি চালের গুঁড়া, ৩-৪ কেজি খেজুরের পাটালি ও তিনটি নারকেল, দুই কেজি কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা ব্যবহার করে মিষ্টি ও ঝাল পিঠা তৈরি করেন।

দৈনিক তার আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়। খরচ বাদে তার লাভ থাকে দেড় হাজার টাকার মতো।

নাসিরনগরের চাতলপাড় থেকে প্রায় ৮ বছর আগে জেলা শহরে আসেন হাসেম ও তার পরিবার। অভাব-অনটনে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। প্রথমে কলা বিক্রি শুরু করলেও কিছু দিন পর শীত মৌসুমে শুরু করেন ভাপা পিঠা বিক্রি। অল্প সময়েই তার পিঠার সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে সংসারে অভাব-অনটন দূর হয়ে গেছে।

শহরের পৌর মার্কেটে প্রধান সড়কের পাশের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সাধারণ জনগণ পিঠার মধ্যে ভাপা পিঠাটা একটু বেশি পছন্দ করেন। চালের গুঁড়া ও খেজুরের গুড়ের তৈরি এই পিঠার স্বাদ রয়েছে। অনেকেই খেয়ে তৃপ্তি পান।’

পিঠা খেতে আসা তিন বন্ধু নাঈম, রিয়াজ ও শফিকুল আলম জানান, আগে তারা বিকেলে হোটেল থেকে অন্য কিছু খেতেন। শীতে পিঠা বিক্রি শুরু হওয়ার পর তারা এখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভাপা খান।

শিক্ষিকা জুনিয়া বেগম বলেন, ‘সারা দিন পরিশ্রম করার পর বাড়িতে পিঠা বানাতে ইচ্ছা করে না। কোর্ট রোড এলাকার ভাপা পিঠাটার বেশ স্বাদ। এখান থেকে সময় সুযোগ হলেই পিঠা নিয়ে খাই, ছেলেমেয়েদের জন্যও নিয়ে যাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আবদুন নূর বলেন, ‘ভাপা পিঠা বাংলাদেশের ঐতিহ্য। বর্তমান সময়ে মানুষ এই ঐতিহ্যগুলো থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। শীতের পিঠা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের ধারণা খুবই কম।

‘বাংলাদেশে কত রকমের পিঠা তৈরি হয়, এটা শুধু তারা বইপুস্তকে পড়েছে। তবে সেগুলোর স্বাদ নেয়ার মতো পরিস্থিতি এখন আর নেই। সবাই এখন শহরমুখী জীবন নিয়ে ব্যস্ত, বর্তমান প্রজন্মকে পিঠা খাওয়ানোর সময় তারা পাবে কোথায়?’

তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তার এই দোকানগুলোতে ভাপা আর চিতই ছাড়া অন্য কোনো পিঠা আমার চোখে পড়েনি। তবে সন্ধ্যার পর শহরের প্রত্যেকটি পিঠার দোকানেই তাই খেতে ভিড় লেগে থাকে।’

এ বিভাগের আরো খবর