নির্বাচনি সহিংসতায় নিহত পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে রোববারও বিক্ষোভ হয়েছে।
রোববার সকালে হাসপাতালে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এরপর বাদ জোহর জানাজা শেষে উপজেলার আওরঙ্গবাদ গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, শনিবারের মতো রোববার সকালেও ইয়াসিন হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে কোলাদী গ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। এ সময় হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ ও তার ভাই আলতাব হোসেনকে অভিযুক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় তারা।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান সাঈদ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ভাঁড়ারা এলাকায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটালেও বিচার পাননি ভুক্তভোগীরা। বিতর্কিত এই চেয়ারম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারাও।
নিহত ইয়াসিন আলমের চাচাতো ভাই ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান বলেন, ‘গত ১২ বছরে চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশে ভাঁড়ারা ইউনিয়নে ৪৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গত নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু করেন সাঈদ। ২০১৮ সালে তার উপস্থিতিতে আমার বৃদ্ধ বাবা লস্কর খাঁ ও চাচা আব্দুল মালেক খাঁকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। আমরা কোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার পাইনি। তার নির্যাতনে স্বজনদের লাশ গুনতে গুনতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এই জুলুমবাজ চেয়ারম্যানের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কি কোনো উপায় নেই।’
ভাঁড়ারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিফাত উল্লাহ বিশ্বাস বলেন, ‘আবু সাঈদ খানের বাবা হাসেন খান স্বাধীনতাবিরোধী শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সাঈদ নিজেও ছিলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দলের নেতা। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ছোট ভাই আলতাবকে সঙ্গে নিয়ে পদ্মা নদীর বালুমহাল দখল ও অস্ত্রের ব্যবসায় বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন সাঈদ। অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যা, লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগ ও থানায় মামলা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন তিনি। অপরাধের ফিরিস্তি জানিয়ে তাকে আবার মনোনয়ন না দিতে আমরা কেন্দ্রে চিঠি দিয়েছিলাম, লাভ হয়নি।’
একই ধরনের অভিযোগ করে আবু সাঈদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভাঁড়ারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামসহ তৃণমূলের নেতারা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দল বিব্রত বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন। তিনি বলেন, এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। তৃণমূল নেতারা লিখিত অভিযোগ দিলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ’নির্বাচন নিয়ে কোনো সংঘাত আমরা চাই না। হত্যাকাণ্ডে যে-ই জড়িত থাক না কেন, নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান দাবি করেছেন নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ। তিনি বলেন, ‘যারা আমাকে স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য বলছে, তাদের বিরুদ্ধেই জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। সুলতান চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ইয়াসিনকে তারা হত্যা করে আমাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করেছে।’
এর আগে শনিবার সকালে ভাঁড়ারা ইউনিয়নের চারা বটতলার ইন্দারা মোড় কালুরপাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান ও আনারস প্রতীকের ইয়াসিন আলমের সমর্থকদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের আবু সাঈদ খানের অনুসারীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় নিহত হন আনারস প্রতীকের ইয়াসিন আলম।
পরে রাতে ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাঈদকে প্রধান আসামি করে নিহতের বাবা মোজাম্মেল হক সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ খানকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’