তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ঢাকা ও রাজশাহীর পর এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করা হয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও যুক্তরাজ্যে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে ফেসবুক লাইভে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল বক্তব্যের অভিযোগ তোলা হয়েছে এসব আবেদনে। আসামি করা হয়েছে ইউটিউবার মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকেও।
চট্টগ্রামে বিভাগীয় সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক এস কে এম তোফায়েল হাসানের আদালতে রোববার দুপুরে আবেদন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চট্টগ্রাম ইউনিটের সভাপতি এ এস এম বদরুল আনোয়ার।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী এনামুল হক।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিয়া পরিবারকে নিয়ে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং জাইমা রহমানসহ নারী সমাজকে নিয়ে মানহানিকর ও অপমানজনক মন্তব্যের অভিযোগে মামলার আবেদন করা হয়েছে। মামলার শুনানি হয়েছে, আদালত এটি আদেশের জন্য রেখেছে।’
সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে দুপুরে মুরাদ ও নাহিদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেটের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আক্তার খান। বিচারক আবুল কাশেম আবেদনটি গ্রহণ করে আগামি ১৫ ডিসেম্বর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি নেতা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে ১৫ ডিসেম্বর আদেশের তারিখ নির্ধারণ করেছেন। মামলায় মুরাদ ছাড়াও নাহিদ রেইনসকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’
নাহিদ রেইনস হলো মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি।
ফয়েজ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলার আবেদন হয়েছে। আমরা আশা করছি, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুরাদ হাসান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্নভাবে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। ইতোমধ্যে তিনি সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকবে না, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে না এ রকম ন্যক্করজনক বক্তব্য রেখেছেন। সর্বোপরি জিয়াউর রহমানের পরিবার, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে নিয়ে অনেক কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন।
‘সবশেষ তারেক রহমানের কন্যা, যিনি ব্যারিস্টারি পড়ছেন লন্ডনে। তিনি বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নন। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকে জাইমা সম্পর্কে যে ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন, সেটা প্রকাশ করতে আমরা নিজেরাই লজ্জিত হচ্ছি। আমরা মনে করি, তাকে গ্রেপ্তার করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা উচিত।’
সদ্য সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ও ইউটিউবার নাহিদের বিরুদ্ধে খুলনা সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম খুলনা সাধারণ সম্পাদক মোল্লা গোলাম মওলা।
এই ফোরামের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, ‘শনিবার আমরা খুলনা সদর থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। থানা থেকে আমাদের জানানো হয় এ মামলা গ্রহণের এখতিয়ার তাদের নেই। সেখান থেকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করেছেন। মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করেছে।’
এর আগে রোববার সকালে মুরাদ ও নাহিদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন হয়েছে ঢাকা ও রাজশাহীতে।
একাধিকবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানোর পর এবার সেই আইনেই মামলার আবেদন করেছে বিএনপি।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চায় বিএনপি
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী।
বিচারক ছুটিতে থাকায় আগামীকাল সোমবার শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে।
রাজশাহীতে সাইবার ট্রাইবুন্যালে মামলার আবেদন হয় রোববার বেলা সাড়ে ১১টায়। বগুড়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম এই আবেদন করেন।
রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা জানান, আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান মামলার বিষয়ে পরে আদেশ জানাবেন।
নাহিদ রেইনসের অনলাইন টকশোতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্যের পর এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে মুরাদের অশালীন বক্তব্যের অডিও ফাঁস হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে তিনি পদত্যাগ করেন। একই সঙ্গে হারান জামালপুর আওয়ামী লীগের পদও।