ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ পরবর্তী প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন যশোরের চাষিরা। বড় ক্ষতির আশঙ্কায় ধান, সরিষা, মসুর, গোলআলু, পেঁয়াজ, মরিচসহ জেলার ফুল চাষিদের এখন মাথায় হাত।
জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা বলছেন, আমন ওঠার এই সময়ে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে ধান গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এখনও যেসব চাষি ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেননি, তাদের ছাড়াও যারা বোরোর বীজতলা তৈরি করেছিলেন তারাও আছেন বড় দুশ্চিন্তায়।
সিংহঝুলি গ্রামের আব্দুস সাত্তার মন্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার পশ্চিমপাড়া মাঠে কেটে রাখা ধান পানির নিচে ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে বোরোর আগাম বীজতলাও।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য, জলাবদ্ধতার কারণে জেলায় ২৫৬ হেক্টর গোলআলু, ৪ হাজার ১৬৩ হেক্টর মসুর, ২০০ হেক্টর মটরশুটি, ৯ হাজার ৯১০ হেক্টর সরিষা, ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর বিভিন্ন ধরনের সবজি, ১৭৫ হেক্টর পেঁয়াজ, ৩০০ হেক্টর মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চাষ করা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ধানের মধ্যে ৪ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমির কাটা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি সরে না গেলে বা আরও বৃষ্টি হলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে।’
ক্ষয়ক্ষতি সরিষা মাঠেও
যশোর বাঘারপাড়ার আরজী বাসুয়াড়ী গ্রামের সৈয়দ নাজমুল আলম আজগর বলেন, ‘আমি দুই বিঘা জমিতে সরিষা করেছিলাম। সরিষায় ফুলও এসেছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে।’
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাদের সরিষায় ফুল এসেছে, বৃষ্টিতে তাদের ক্ষতি কম হবে। তবে, তলিয়ে যাওয়া মসুর ক্ষেতের ক্ষতি হবে।’
ভালো নেই ফুল চাষিরা
ফ্লাওয়ার সোসাইটির মতে, যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ৭৫টি গ্রামে প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি আছেন। শত শত হেক্টর জমিতে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, গ্লাডিওলাস, কসমস ও চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেন তারা।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বর্ষণের কারণে জলাবদ্ধতায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসব ফুল চাষিরাও।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য কর্মকর্তা উপসহকারী মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ‘গোলাপ ও রজনীগন্ধা প্রায় শেষের পথে। তবে গাঁদা ৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ২৫ হেক্টর ও গ্লাডিওলাস ২১২ হেক্টরের মধ্যে ১০৫ হেক্টর জমির ফুল পানিতে ডুবে যায়।
‘গাঁদা ফুল পানিতে সব নষ্ট হলেও কিছু চারা থেকে আবার ফুল আশা করা যায়। তবে গ্লাডিওলাস সব নষ্ট হয়ে যাবে।’
নিউজবাংলাকে ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি জনাব আব্দুর রহিম বলেন, ‘ফুল চাষের জন্য শেড তৈরি করা হয়। যাদের শেড আছে তাদের ফুল ভাল আছে। কিন্তু শেড থাকা চাষির সংখ্যা সীমিত।’
‘অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বাকি সবার ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে ফুলের দাম ভাল ছিল। কিন্তু ফুলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়া চাষিরা বড় সঙ্কটে পড়েছেন।’