রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর দলে বিভেদ ছড়িয়ে পড়েছে। একাংশের নেতা-কর্মীরা এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে দল থেকে পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছেন।
তাদের দাবি, এই কমিটিতে যারা জায়গা পেয়েছেন তাদের একাংশ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়, আরেক অংশ আওয়ামী লীগের এজেন্ট।
কমিটি বিরোধিতাকারীদের দাবি, যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তাকে বিএনপির রাজনীতিতে দেখা যায়নি। তিনি কীভাবে এ পদ পেলেন।
তবে আহ্বায়ক কমিটির নেতারা বলছেন, যাদের পদ নেই তাদের পদত্যাগের হুমকি কোনো প্রভাব রাখে না।
রাজশাহী নগরীর শাহ্ মখদুম থানা কার্যালয়ে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে নেতারা দাবি করেন, মহানগর বিএনপির কমিটির নেতারা নিষ্ক্রিয় ও বিএনপিবিমুখ।
সংবাদ সম্মলনে মহানগর বিএনপির আওতাধীন বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্য বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপির মহাসচিবের কাছে আবেদন করছি, দ্রুত রাজশাহী মহানগর বিএনপির বিতর্কিত কমিটি বাতিল করতে হবে।
‘একই সঙ্গে বিএনপির বৃহত্তর স্বার্থে নিষ্ক্রিয় ও আওয়ামী লীগের এজেন্টদের বাদ দিয়ে ত্যাগী জনপ্রিয় পরীক্ষিত নেতাদের দিয়ে নতুন মহানগর কমিটি গঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা সব থানা ও ওয়ার্ডের নেতারা গণপদত্যাগ করতে বাধ্য হব।’
তিনি দাবি করেন, দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার যখন দিন দিন অবনতি হচ্ছে, ঠিক তখন রাজশাহী মহানগর বিএনপির ৯ সদস্যবিশিষ্ট অচল কমিটি গঠিত হলো। যারা কর্মীবিচ্ছিন্ন, দীর্ঘদিন কর্মসূচিবিমুখ, আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়েই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া সদস্যদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া এরশাদ আলী ইশার দলের কোনো কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্ক নেই।
১/১১ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী দুঃশাসনবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে রাজশাহীতে শত শত নেতা-কর্মী ডজন ডজন মামলার আসামি হলেও নবগঠিত কমিটির আহ্বায়কের নামে কোনো মামলা হয়নি, কারণ তিনি রাজনীতি করতেন না।
অভিযোগের বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ইশা বলেন, ‘তাদের তো পদই নেই, কীভাবে পদত্যাগ করবে? আমরা গত রাতেই সব কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছি। তাদের পদত্যাগ হয়েই গেছে। থানা কমিটির ব্যানারে তারা কোনো কিছুই করতে পারবে না। আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা মানেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে ডেকেছি। আমরা কোনো দায়দায়িত্বে না। আমরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হব না। আমরা তো শুধু সম্মেলন করে ছেড়ে দেব। আমরা প্রতিটা ওয়ার্ডে যাব।
‘গণতান্ত্রিকভাবে সম্মেলন হবে। যারা আসবে তারা আসবে, না আসলে না আসল। তারা যদি বিকল্প বিএনপি করতে পারে, তো করবে। আমরা যত দ্রুত পারি সম্মেলেন করব।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে এরশাদ আলী ইশাকে আহ্বায়ক করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির ৯ সদস্যের এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে অনুমোদিত হয়েছে বলে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
কমিটিতে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হয়েছেন মামুনুর রশিদ। এ ছাড়া ৭ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। তারা হলেন নজরুল হুদা, দেলোয়ার হোসেন, মো. ওয়ালিউল হক, আসলাম সরকার, শাফিকুল ইসলাম, বজলুর রহমান ও জয়নাল আবেদিন।