বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বধ্যভূমিতে চরছে গরু, সংরক্ষণে নেই উদ্যোগ

  •    
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:০৫

অযত্ন আর অবহেলায় মাদারীপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ১৫টি বধ্যভূমিই হারিয়ে যাওয়ার পথে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এগুলো সংরক্ষণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কুকরাইল মৌজার এ আর হাওলাদার জুট মিলের ভেতরে রয়েছে জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধের সময় মিলের ডি-টাইপ বিল্ডিংয়ের টর্চার সেলে অসংখ্য মানুষকে মাসের পর মাস নির্যাতনে হত্যার পর মাটিচাপা দেয়া হয় এখানে।

এই বধ্যভূমিতে রয়েছে প্রায় ৭০০ সাধারণ মানুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ। সহস্রাধিক মুক্তিপাগল বাঙালিকে আড়িয়াল খাঁ নদের পারে মিলের জেটির ওপর দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতিচিহ্ন এই বধ্যভূমি এখন গো-চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও অযত্ন, অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ত্যাগের স্মৃতির এ স্থান।

শুধু এ আর হাওলাদার জুট মিলের বধ্যভূমি নয়, মাদারীপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ১৫টি বধ্যভূমিই হারিয়ে যাওয়ার পথে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এগুলো সংরক্ষণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, সরকারিভাবে ২০১৩ সালে মাদারীপুরের ১০টি বধ্যভূমি উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ সমীক্ষা শেষে ২০১৪ সালে একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয় পরে চারটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের অনুমোদন দেয়। তবে এত দিন পরও গণপূর্ত বিভাগ সেই কাজ শুরু করতে পারেনি।

এ ছাড়া সরকারিভাবে ১০টি বধ্যভূমির কথা বলা হলেও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আরও অন্তত ৫টি স্থানকে চিহ্নিত করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলায় ৭টি এবং রাজৈর উপজেলায় ৮টি গণকবর বা বধ্যভূমি রয়েছে।

কেন্দুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কলাগাছিয়া সুষেন হালদারের বাড়ির পুকুর পাড়ের বধ্যভূমি

সদর উপজেলার এ আর হাওলাদার জুট মিলের বধ্যভূমি ছাড়া অন্য ছয়টি গণকবর হলো কেন্দুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কলাগাছিয়া সুষেন হালদারের বাড়ির পুকুর পারের বধ্যভূমি, একই ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের তারাপদ শিকারি বাড়ির পুকুর পারের বধ্যভূমি, দুধখালী ইউনিয়নের মিঠাপুর শিকদার বাড়ি বধ্যভূমি, একই ইউনিয়নের মিঠাপুর গোপী ঠাকুরের বাড়ির পেছনের বধ্যভূমি, কেন্দুয়া ইউনিয়নের চৌহদ্দি হাটখোলা বধ্যভূমি ও মাদারীপুর পৌরসভার কুলপদ্বী সাবেক সরকারি শিশু সদন ভবনের পূর্ব পাশের বধ্যভূমি।

রাজৈর উপজেলার আটটি গণকবর হলো বাজিতপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের কেষ্ট বৈদ্যর বাড়ির পুকুর পারের বধ্যভূমি, আমগ্রাম ইউনিয়নের পাখুল্লা গ্রামের রাসু গাটিয়ার বাড়ির পুকুর পারের বধ্যভূমি, কদমবাড়ি ইউনিয়নের গণেশ পাগলের সেবা আশ্রমের পূর্ব পাশে পুকুর পারের বধ্যভূমি।

এ ছাড়া খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামের আলেক ফকিরের বাঁশঝাড় সংলগ্ন ৩ খালের সংযোগ স্থানের বধ্যভূমি, একই গ্রামের সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়ির দক্ষিণ পূর্ব কোণের বধ্যভূমি, শচীন বারিকদারের বাড়ির দক্ষিণ পাশে খালের পার বধ্যভূমি, ডা. রাসু বারিকদারের বাড়ির পাশে বাগানের ভেতরের খালপাড় দক্ষিণ পূর্ব কোণে বধ্যভূমি ও ছাতিয়ানবাড়ি গ্রামের পূর্ণ চন্দ্র বৈদ্য বাড়ির উত্তর পার পুকুরের মধ্যে বধ্যভূমি।

রাজৈরের একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানিয়েছেন, উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া, ছাতিয়ান বাড়ি, উল্লাবাড়ি ও পলিতা গ্রামের চারটি বধ্যভূমিতে ১২৭ শহীদের মরদেহ রয়েছে।

বাজিতপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের কেষ্ট বৈদ্যর বাড়ির পুকুর পারের বধ্যভূমি

তারা জানান, ১৯৭১ সালে টেকেরহাটের চিহ্নিত রাজাকার মহিউদ্দিন হাওলাদারের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা ওই চার গ্রামে তাণ্ডব চালায়। তারা গ্রামগুলোর আখ ক্ষেতে পালিয়ে থাকা নিরীহ নর-নারী ও শিশুকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। সন্ধ্যার দিকে মরদেহগুলো চারটি গণকবরে মাটিচাপা দেয় গ্রামবাসী।

সেনদিয়া গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়রা ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন। সেই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাদার মারিনো রিগন। এই স্মৃতিস্তম্ভের শিলালিপিতে ১২৬ শহীদের নাম রয়েছে। আরেকজনের নাম জানা সম্ভব হয়নি।

একাত্তরে খলিল বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান বলেন, ‘মাদারীপুরে সবচেয়ে বড় দুটি গণকবর হলো এ আর জুট মিলের মাঠ আর কেন্দুয়ার সুষেন হালদারের বাড়ির পুকুর পার। এই দুই স্থানে সহস্রাধিক নারী-পুরুষকে হত্যা করে কবর দেয়া হয়েছে। বাকি প্রায় ১৩টি ছোট-বড় গণকবর রয়েছে।

‘এগুলোর মধ্যে ১০টির আবেদন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছিল, বাকিগুলোও ক্রমান্বয় দেয়া হচ্ছে। তবে এর একটিরও স্মৃতিরক্ষার্থে বড় কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে গণকবরগুলোর স্মৃতি মুছে যেতে বসেছে।’

এ বিষয়ে মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘২০১৪ সালে ১০টার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। মিনিস্ট্রি থেকে পাস হয়েছে চারটি। তবে এখন পর্যন্ত কোনোটারই কাজ শুরু করতে পারি নাই। তবে আশা করছি, শিগগিরই দুইটার কাজ শুরু করতে পারব।

‘ডিসি অফিসে আমি জায়গা চেয়েছি। সপ্তাহ দুয়েক আগে ডিসি মহোদয় জায়গা ভিজিট করেছেন। একটি কেন্দুয়ায়, একটি মিঠাপুরে। এই দুইটার ওপরে এসি ল্যান্ড শিগগিরই একটা প্রস্তাব দিয়ে দেবেন। এসি ল্যান্ড প্রস্তাব দিলে আমরা মিনিস্ট্রিতে পাঠিয়ে কাজ শুরু করে দেব। জুট মিলেরটাও লিস্টে আছে। যেহেতু জায়গাটা নিষ্কণ্টক না, সেহেতু ওখানে কাজ শুরু করতে পারছি না।’

জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘এরই মধ্যে দুটি গণকবরের স্থান পরিদর্শন করেছি। আশা রাখি, জায়গাসংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে শিগগিরই কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া বাকি যেসব গণকবর আছে, সেগুলোরও স্মৃতি রক্ষার্থে সরকারি নানা পদক্ষেপ রয়েছে। আমরা নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করব।’

এ বিভাগের আরো খবর