গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ।
শনিবার বিকেলে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এই শ্রদ্ধা জানান তিনি। পরে পবিত্র ফাতেহা পাঠ শেষে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্ট শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি গাজীপুরকে একটি আধুনিক শহরে রূপ দিতে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আমি আমার মেধা ও অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে গাজীপুরকে একটি অধুনিক বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত অর্থের সুষম বণ্টন করেননি সদ্য বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নগর ভবনকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন। আমি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে কাউন্সিলরদের পরামর্শ ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে নগর ভবনকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে কাজ শুরু করেছি। নগরীর উন্নয়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাব।’
এ সময় মেয়রের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সহসভাপতি ওসমান আলি খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, কাজী ইলিয়াস আহমেদ, প্যানেল মেয়র-২ ও ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল আলিম মোল্লা, প্যানেল মেয়র-৩ আয়েশা আক্তার, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার, ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হোসেন, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী খালেদুর রহমান রাসেল, টঙ্গী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মঞ্জুর প্রমুখ।
এর আগে ভোরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে গাজীপুর থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ঘরোয়া আলোচনার রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তাকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করতে শোনা যায়। এরপর আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভে নামে।
ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরের ব্যাখ্যা চায় আওয়ামী লীগ। তাকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবর সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই মেয়র তার ব্যাখ্যা দেন বলে নিউজবাংলাকে জানান।
এরপর ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ১৯ নভেম্বর তাদের দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
১৯ নভেম্বরের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর ছয় দিন পর ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর। একই দিন তিন সদস্যের একটি প্যানেল মেয়র গঠন করে দেয় স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়।
এ সময় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। এর আগেও বিএনপির মেয়র অধ্যাপক আব্দুল মান্নান কারাগারে থাকাকালীন ২৭ মাস ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন কিরণ।