পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে নির্বাচনি সহিংসতায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহতের ঘটনায় দুজনকে অস্ত্রসহ আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে ওই নির্বাচনও।
নিহত ইয়াসিনের মরদেহ নিয়ে বিকেলে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা।
ইউনিয়নের কোলাদীচারা বটতলা এলাকায় শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান ও আনারস প্রতীকের ইয়াসিন আলমের সমর্থকদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের আবু সাঈদ খানের অনুসারীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় নিহত হন আনারস প্রতীকের ইয়াসিন আলম।
এর পরই আভিযানে দুজনকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া আগামী ২৬ ডিসেম্বর হতে যাওয়া চতুর্থ ধাপের নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
সহিংসতায় প্রাণ যাওয়া ইয়াসিনের মরদেহ দুপুরে কোলাদী গ্রামে পৌঁছালে ইয়াসিন ও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতানের সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
আওরঙ্গবাদ এলাকায় নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদের সমর্থকদের বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালান তারা। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
মিছিল শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচন থেকে সরাতে ও আমাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে সাঈদ এর আগেও আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমার বাবাকেও হত্যা করেছে। আমি কোনো হত্যারই বিচার পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘সাইদের অত্যাচার থেকে এলাকাবাসীকে মুক্ত করতে আমি ও ইয়াসিন যৌথভাবেই নির্বাচনে নেমেছিলাম। ইয়াসিনকেও তারা হত্যা করল। আমি আর ভোট চাই না, আমার স্বজনদের প্রাণ ফেরত চাই।’
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমার লোকজন নৌকার ভোট চাইতে গেলে কালাম মেম্বারকে সুলতানের লোকজন হাতুড়িপেটা করে। শনিবার সকালে আমি তাকে দেখতে যাই। ফিরে আসার পথে কোলাদী ইন্দ্রারা মোড়ে এলে সুলতানের লোকজন আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলে আমার ছোট ভাই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় আমি পাশের ড্রেনে লাফিয়ে না পড়লে আমাকে তারা হত্যা করত। এ ঘটনায় আমার কয়েকজন সমর্থক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন।’
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিকস কনসালট্যান্ট রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আহত ১০-১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। কয়েকজনকে রাজশাহী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকনউজজামান বলেন, ‘ভাঁড়ারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ৮-১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় দেশীয় ও বিদেশি অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।’
পাবনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়সার আলম বলেন, ‘বৈধ চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হওয়ায় ২০১০ সালের ইউপি নির্বাচনী বিধিমালা অনুসারে ভাঁড়ারা ইউনিয়নে ওই পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এদিকে সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পাবনা সদর থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর আগে সকালে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রচার নিয়ে সকালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান ও আনারস প্রতীকের ইয়াসিন আলমের সমর্থকদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের আবু সাঈদ খানের অনুসারীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এতে উভয় পক্ষের গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অন্তত ১৫ জন। আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ইয়াসিনের মৃত্যু হয়।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সুলতান মাহমুদ খান ও নিহত ইয়াসিন আলম সম্পর্কে চাচাতো ভাই বলে জানান ওসি।