সারা দেশে শিশুদের জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম চলমান। এ বিষয়টির সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। তবে যদি বলা হয় গরু-মহিষের জন্মনিবন্ধন।
শুনে হয়তো অবাক হবেন অনেকেই। কেউ কেউ গুজব ভেবে এড়িয়েও যেতে পারেন। তবে সত্যিটা হলো রাজশাহীর সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলের গরু-মহিষেরও নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে বহু বছর ধরে। সেখানে এটি বাধ্যতামূলক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি বলছে, সীমান্তে গরু-মহিষ চোরাচালান ঠেকাতে এই নিবন্ধন করা হয়। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পশুর নিবন্ধন করাতে গিয়ে তারা মাঝেমধ্যেই হয়রানির মধ্যে পড়েন।
রাজশাহীর পবা উপজলেরা চরমাঝারদিয়াড় এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম নিজ বাড়িতে লালন-পালন করেন তিনটি গরু। এর মধ্যে সম্প্রতি একটি গরু বাচ্চা দিয়েছে। নতুন বাচ্চাটি নিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে। এখানেই হবে বাছুরের জন্মনিবন্ধন।
আশরাফুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে গরু পালতে হলে বিজিবির কাছে সেটির নিবন্ধন নিতে হয়। এ জন্য কোনো টাকা লাগে না। তবে গরুটি দেখতে কেমন তার একটি বর্ণনা থাকে। নিবন্ধনভুক্ত না করলে সেটি অবৈধ গরু হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই বাছুর জন্ম নিলে সেটিকে আমরা জন্মনিবন্ধন করিয়ে নিই।’
‘গরুর বাচ্চা হলে ১০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করতে হয়। বিক্রি করতে হলেও সেটি এক দিন আগে ছাড় করতে হয়’- জানান আশরাফুল।
আশরাফুলের গরুর মতো এ এলাকার প্রতিটি গরুরই আছে নিবন্ধন। জন্ম বা ক্রয়সূত্রে হোক সেই গরুকে নিবন্ধন নিতে হয়। আর কোনো গরু বিক্রি করতে হলে, সেটির জন্য নিতে হয় ছাড়পত্র। আবার কোনো কারণে সেটি বিক্রি না হলে, ফিরিয়ে আনার পর জানাতে হয় বিজিবিকে। এই নিয়ম চলছে বহু বছর ধরেই।
মূলত চোরাচালান ঠেকাতেই এই কার্যক্রম হাতে নেয়ার কথা জানিয়েছে বিজিবি। বিশেষ করে অবৈধভাবে যাতে ভারতীয় গরু দেশে ঢুকতে না পারে সে জন্য এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে এই নিয়মকে হয়রানি মনে করছেন অনেকেই।
শফিকুল ইসলাম নামে ওই এলাকার এক গরু পালনকারী বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেকেই গরু পালন করেন। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরু থাকে। বাচ্চা হলে সেটির জন্মনিবন্ধন কার্ড তুলতে হয়।
‘না করলে আমাদের বিভিন্ন রকম কথা শুনতে হয়, ভারত থেকে নিয়ে আসা গরু বলে। এ ছাড়া গরু বেচতে ও কিনতে হলেও এখান থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কোনো রকম ভুল হলে আবার হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়।’
গরু পালনকারী আব্দুস সালাম বলেন, ‘এই দেশে আমরা গরু পালন করি। অথচ এটি বিক্রি করতে গেলে আমাদের ছাড়পত্র নিতে হবে। দেশি গরু, নিজেদের পালন করা গরু, এটা কী মানুষ চেনে না?’
পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চরমাঝারদিয়াড় এলাকার নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য হুমায়ন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গরু বিক্রির দরকার পড়লে ছাড়পত্র নিতে হয়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে এই ছাড়পত্র পাওয়া যায়। এতে ভোগান্তির শিকার হন অনেকে।’
গোদাগাড়ী উপজেলার আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই এই নিয়ম চলছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে এ ব্যাপারে থেকে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিজিবির কাছে হিসাব আছে, কোন বাড়িতে কয়টা গরু আছে।
'আমরা ছাড়পত্র দিলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। বিজিবির নিবন্ধন লাগে। এতে তো চেয়ারম্যানদের ইজ্জত থাকে না।’- বলেন সানাউল্লাহ।
রাজশাহী বিজিবির অধিনায়ক সাব্বির আহম্মেদ নিউজবাংলাকে বলেন, চরের স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার যারা আছেন তারাই এটি দেখেন। বিজিবির একটা অ্যাকাউন্টিবিলিটি থাকে। চর এলাকায় কী পরিমাণ গরু আছে সেটির একটি সাধারণ অ্যাকাউন্টিবিলিটি বিজিবির থাকে। না হলে দেখা যাচ্ছে, সীমান্তের ওপার থেকে গরু এনে বলে দেবে যে, এটি আমাদের গরু।
‘কেউ যদি গরু বিক্রি করে দেয় সেটাও বিজিবিকে জানানো হয়। বিশেষ করে সীমান্ত, যেগুলো একেবারেই সীমান্ত এলাকা। যেখানে বিশেষ করে বাথান থাকে। সেগুলোর একটা সাধারণ অ্যাকাউন্টিবিলিটি বিজিবির কাছে দেয়া থাকে। বিজিবি বলতে বিজিবির স্থানীয় যে বিওপি (ক্যাম্প) থাকে সেগুলোয়। এটি শুধু গরু-মহিষের জন্য। চোরাচালান রোধে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’