স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধ হয়েছিল, মালিকরা তাদের গাড়িতে সেটি আবার লাগাচ্ছেন। এটা কীভাবে হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। আইন ভঙ্গ করে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছি। এভাবে প্রতিনিয়ত আইন ভাঙছি। আমরা আইনভঙ্গকারী জাতিতে পরিণত হয়েছি।’
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর কেন্দ্রীয় কমিটি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য শাখা যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমরা চাই একটি সড়ক দুর্ঘটনাতেও যেন মানুষ না মারা যায়। সরকারও সেভাবে কাজ করছে। কিন্তু মহামারি ক্যান্সার প্রভৃতি রোগে যে সংখ্যক মানুষ মারা যায়, তার চেয়েও সড়ক দুর্ঘটনায় বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে। ১৫-২০ বছর আগে যদি ফিরে দেখেন, ঢাকা-আরিচা সড়ক যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছিল। ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর সেখানে যাতায়াতের সময় সে দুর্ঘটনা তেমন দেখি না। মূলত রাস্তা উন্নতকরণের কারণে দুর্ঘটনা কমে এসেছে। তবে শুধুই যে সড়ক বা চালকের জন্য দুর্ঘটনা ঘটে, তাও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে ২০ শতাংশ সড়ক আছে। কিন্তু আমরা নিজেদের দেশে সেটিকে ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে এনেছি। প্রধানমন্ত্রী যাতায়াত নিরবচ্ছিন্ন করতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, ব্রিজ প্রভৃতি নির্মাণ করে চলেছেন। জার্মানিতে দেখেছি, আড়াই শ কিলোমিটার গতিতেও গাড়ি চলেছে। কিন্তু সেটা আমরা চিন্তা করতে পারছি না আমাদের জনবহুল ১৮ কোটি মানুষের জন্য।’
দুর্ঘটনা রোধে নিসচার ১১১টি সুপারিশ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ১১১টি সুপারিশ করেছিলেন। সেটি আমার ওপর দায়িত্ব পড়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী এটি আমার হাতে দিয়েছেন। এসব সুপারিশের বাস্তবায়ন এক-দুই বছরে করা সম্ভব না। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি করে করতে হবে। বাস-ট্রাক বের কথা বলা হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া সড়কে এমনটি করা হয়েছে। আমাদের জায়গা কম, ইচ্ছা অনেক বেশি। ধীরে ধীরে চালকদের বিশ্রামাগার রাখার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদেরও বিশ্রাম প্রয়োজন। আবার ড্রাইভারকেও সচেতন হতে হবে।
‘ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করার পরিকল্পপনা রয়েছে। তখন পুরো ঢাকা ক্যামেরার অধীনে চলে আসবে। তবে এটাও সময়সাপেক্ষ। এরপর চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহরেও তাই করা হবে।’
এ সময় ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘২৮ বছর আগে যখন এই আন্দোলন শুরু করি, তখন অনেকেই আমাকে পাগল বলত। বলত, সড়ক দুর্ঘটনায় বউ হারিয়ে লোকটা পাগল হয়ে গেছে। তার পর থেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আমার স্ত্রী ডিসেম্বরে কিন্তু মারা জাননি, তবু ডিসেম্বরকে আমাদের বিজয়ের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছি, যে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে আরেকটি বিজয় চাই। মুখের কথা দিয়ে নয়, বাংলাদেশকে হৃদয় দিয়ে ধারণ করি। আমরা মনে করি, চালকরাও আমাদেরই লোক, তাদের জন্য কাজ করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। করোনাকালে চালকদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম এবং বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান ম. আ. হামিদ।