মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, র্যাব এটি রক্ষা করে চলেছে বলে দাবি করেছেন বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এমন দাবি করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গণমাধ্যমে আসা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেছে। আমি বলব, র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি; বরং রক্ষা করে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুনেছি। অফিশিয়ালি এখনও কোনো পত্র পাইনি। অফিশিয়ালি কোনো পত্র পেলে সেটা নিরীক্ষার্থে স্বরাষ্ট্র বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মানবাধিকার রক্ষায় র্যাবের ৯ হাজার সদস্যের যে ফোর্স, সেই ফোর্সের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদসহ ২৮ সদস্য জীবন দিয়েছেন। মানবাধিকার রক্ষায়, আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে এক হাজারের বেশি সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছে। আমাদের দুই হাজারের বেশি সদস্য বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, আপনারা বলেছেন, আমাদের মন্ত্রীরা বলেছেন, র্যাবের সাফল্যের কারণে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। র্যাবের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। বিশ্বে খুব কম দেশেই এমন নজির রয়েছে যে, সুন্দরবনের মতো বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল দস্যুমুক্ত হয়েছে।’
র্যাবকে এলিট ফোর্স হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই বাহিনীর নিজস্ব যে আইনশৃঙ্খলা রয়েছে, তা অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হয়। এখানে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।’
ক্রসফায়ারের অভিযোগ বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়ে থাকে যে, গুলিবিনিময় বা ক্রসফায়ারের ঘটনা। আমরা মনে করি একটি দেশের সুস্থ বা স্বাভাবিক নাগরিক হিসেবে নিজের আত্মরক্ষার যে অধিকার, এটা কিন্তু দেশের আইন দিয়েছে।
‘আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন অভিযানে যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আমরা যখন প্রতিরোধের শিকার হয়েছি বা আমাদের ওপর যখন সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে, তখনই আমরা গুলি করেছি। এই গুলিবিনিময়ে আমাদের এখন পর্যন্ত ২৮ সদস্য শহীদ হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত হয়। সেখানে যাচাই-বাছাই করা হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের সাত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায়। দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট আলাদাভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মুস্তফা সরওয়ার, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও আনোয়ার লতিফ খান এবং বাহিনীটির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ।
বিষয়টি নিয়ে শনিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বস্তুনিষ্ঠভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তারা অতিরঞ্জিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি অভিযোগ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্ত হয়। কোনো সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়।’