আলোচনার টেবিলে থাকা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের একতরফাভাবে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ট্রেজারি এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্তকে ‘হতাশা’ ও ‘দুঃখজনক’ বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শনিবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলারকে ঢাকার অসন্তোষ জানাতে তলব করা হয়।
এরপর বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগের কথা ওয়াশিংটনে বাইডেন প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলার।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, যেসব ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত এসেছে, সেগুলো দুই দেশের নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনার কাঠামোর অধীনে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়া তার সিদ্ধান্ত জানানোয় হতাশা প্রকাশ করেন মোমেন।
পররাষ্ট্র সচিব দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে যেসব ঘটনার জন্য র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কাছেই নয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছেও একাধিকবার ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ যাচাই-বাছাই ছাড়া অনুমাননির্ভর বলে ঢাকার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে বলেও জানান মাসুদ বিন মোমেন।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে ‘জাতিগত নির্মূলের’ মতো ভয়াবহ আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু নির্দিষ্ট দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াটাও দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন মোমেন।
পররাষ্ট্র সচিব জোর দিয়ে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার আইনের শাসন এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দ্বারা সংগঠিত যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ বা ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি রয়েছে।”
বাংলাদেশে ইউনিফর্মধারী সব বাহিনী তাদের যেকোনো সদস্যের অন্যায় ও নীতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ মোকাবিলায় আইনি এবং প্রশাসনিক কাঠামো মেনে চলে বলেও যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে ঢাকা। র্যাবও তার বাইরে নয় বলে জানান মোমেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিপথগামীতার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহার হয়েছে বলে রিপোর্ট আছে। কিন্তু তাই একটি বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের টার্গেট করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ন্যায্যতার পরিচায়ক নয়।’
ঢালাও অভিযোগের পরিবর্তে আলোচনা, সংলাপ, সম্পৃক্ততা এবং সহযোগিতার পথ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন পররাষ্ট্র সচিব মোমেন।
আগামী বছর দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীর বিষয়টি সামনে এনে মোমেন বলেন, ‘বিদ্যমান অংশীদারত্বকে আরও প্রসারিত ও বহুমাত্রিক করার পথ উন্মুক্ত করা উচিত।’
বাংলাদেশ সরকারের উত্থাপিত উদ্বেগের কথা নোট করেন রাষ্ট্রদূত মিলার। তা দেশটির রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি সম্মত হয়েছেন যে, বিদ্যমান আলোচনা প্রক্রিয়া ও উচ্চপর্যায়ের সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের চমৎকার বহুমুখী সম্পর্ক আরও গভীর করা যেতে পারে।
পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগামী দিনেও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইচ্ছার কথাও তুলে ধরেন মিলার।