বাংলাদেশে দুজনের শরীরে করোনাভাইরাসের আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রাজধানীর শ্যামলীতে শিশু হাসপাতালে শনিবার দুপুর ২টার দিকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
করোনার দ্রুত সংক্রমণশীল ধরন ওমিক্রন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কর্ণাটকসহ বিভিন্ন রাজ্যে এ ধরন শনাক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে ভাইরাসের ধরন শনাক্তের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে আসা জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের দুই ক্রিকেটারের দেহে ওমিক্রনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাদের তৃতীয় দফা পরীক্ষায়ও ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। যারা বিদেশ থেকে আসবে, তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আমাদের বলেছে, যে টিকা আমরা দিচ্ছি, ওমিক্রন প্রতিরোধে তা অনেকটা সক্ষম। তাই সবার টিকা নেয়া উচিত।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার বাড়তি ডোজ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনায় এখন পর্যন্ত মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই বয়স্ক। তাই তাদের বুস্টার ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
বুস্টার ডোজ কবে নাগাদ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না, তবে আশা করি খুব শিগগিরই শুরু হবে।’
ওমিক্রন শনাক্ত হওয়া নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যায় দুজনের নমুনা নেয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
তিনি জানান, জিনোম সিকোয়েন্সিং করার পর ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত তাদের বিষয়টি দেখছেন।
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের টুর্নামেন্ট শেষে ১ ডিসেম্বর দেশে ফেরে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। দেশে ফিরে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ৫ দিনের কোয়ারেন্টিনে প্রবেশ করেন ক্রিকেটাররা।
আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানা থেকে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার কারণে টুর্নামেন্টের মাঝপথেই বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব বাতিল করতে বাধ্য হয় আইসিসি।
কীভাবে শনাক্ত হলো ওমিক্রন, উপসর্গ কী
রোগীদের মধ্যে ওমিক্রনকে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তিত নতুন বৈশিষ্ট্য হিসেবে শনাক্ত করা প্রথম চিকিৎসকদের একজন সাউথ আফ্রিকার অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি। নতুন ধরনের ভাইরাসটির উপসর্গ এখন পর্যন্ত বেশ মৃদু এবং বাড়িতে থেকেই এর চিকিৎসা নেয়া সম্ভব বলে মত তার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সাউথ আফ্রিকায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ডেল্টা বেশি সংক্রমিত। কিন্তু ড. কোয়েৎজি গত ১৮ নভেম্বর নিজের ক্লিনিকে সাত রোগীর মধ্যে ডেল্টা উপসর্গের চেয়ে কিছু ভিন্ন উপসর্গ লক্ষ্য করে সতর্ক হন। যদিও সেসব উপসর্গ ছিল অত্যন্ত মৃদু।
সাউথ আফ্রিকান চিকিৎসক সমিতির প্রধান ড. কোয়েৎজি জানান, ওই রোগীরা দুই দিন ধরে ‘অতিরিক্ত ক্লান্তিতে ভুগছিলেন।’ সঙ্গে মাথা ও শরীরব্যথা তো ছিলই।
তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ের উপসর্গ সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণের মতোই। কিন্তু গত ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ কোনো কোভিড রোগী পাইনি বলে আমরা তাদের পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিই।’
পরীক্ষায় এক পরিবারের সব সদস্য করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন।
একই দিন কাছাকাছি উপসর্গ নিয়ে আরও রোগী আসতে শুরু করলে নড়ে বসেন ড. কোয়েৎজি। কারণ এর আগ পর্যন্ত দিনে বড়জোর দুই থেকে তিনজন রোগী দেখছিলেন তিনি।
কোয়েৎজি বলেন, ‘মহামারির তৃতীয় ধাক্কার সময় ডেল্টায় আক্রান্ত অসংখ্য রোগী আমরা পেয়েছি। নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে যাচাই করে বুঝতে পারি যে তখনকার দৃশ্যপটের তুলনায় এখনকার দৃশ্যপটের পার্থক্য আছে।’
নমুনা পরীক্ষার ফল সেদিনই সাউথ আফ্রিকার জাতীয় সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিডি) জমা দেন কোয়েৎজি।তিনি বলেন, ‘যারা ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগের মধ্যেই খুব মৃদু উপসর্গ ছিল এবং কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি। তাদের বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে বলেছিলাম আমরা। সেভাবে চিকিৎসা নিয়ে তারা সুস্থ আছেন।’
সাউথ আফ্রিকায় করোনার টিকাবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য ড. কোয়েৎজি। তার মতে, ডেল্টার মতো ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে স্বাদ-ঘ্রাণ হারানো কিংবা অক্সিজেনের লেভেল বড় ব্যবধানে কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ এখনও দেখা যায়নি।
কোয়েৎজির অভিজ্ঞতা বলছে, ওমিক্রনে আক্রান্তরা সবাই ৪০ বছরের কম বয়সী বা তরুণ। আক্রান্ত যাদের তিনি চিকিৎসা দিয়েছিলেন, তাদের প্রায় অর্ধেকের করোনা প্রতিরোধী টিকা নেয়া ছিল না।
গত ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর গবেষণাগার থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ভিত্তিতে ২৫ নভেম্বর করোনার নতুন ধরনটির অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে বলে ঘোষণা দেয় এনআইসিডি। পরদিন একে ওমিক্রন নাম দিয়ে চিহ্নিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।