বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফাইভজি যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১২:২১

মোস্তাফা জব্বার জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক ১২ ডিসেম্বর ফাইভজি চালু করবে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় এ সেবা চালু হবে।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ১২ তারিখ দেশে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা ফাইভজি।

সচিবালয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ভার্চুয়ালি এ সেবা উদ্বোধন করবেন।

মোস্তাফা জব্বার জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক ১২ ডিসেম্বর ফাইভজি চালু করবে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় এ সেবা চালু হবে।

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ঢাকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২, বাংলাদেশ সচিবালয়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং ঢাকার বাহিরে সাভার ও টুঙ্গিপাড়াকে এর কাভারের আওতায় আনা হবে। পরবর্তী সময়ে টেলিটক ঢাকার ২০০টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ প্রযুক্তি সেবা চালু করবে।

‘আগামী বছরের মার্চে বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ নিলামে দেয়ার পর বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর এ প্রযুক্তি চালু করবে। ২০২২ সালের পর টেলিটক ও বিটিসিএল দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, বিশেষ করে স্পেশাল ইকোনোমিক জোনগুলোতে এ সেবা চালুর প্রস্তুতির কাজ করছে।’

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন বলেন, ‘এখন আমরা ফাইভজি যেটা চালু করছি, এটার ফার্স্ট স্ট্যান্ডার্ডটা আমরা ফলো করছি। এটার সেকেন্ড স্ট্যান্ডার্ডের কাজ হচ্ছে। ২০২২-এ হয়তো সেটা রিলিজ হবে। আমরা সেকেন্ড স্ট্যান্ডার্ডটা ফলো করব।

‘আমি একটি কথা বলতে পারি, বাংলাদেশ কোনো প্রযুক্তিতে আর পিছিয়ে থাকবে না। ফাইভজি, সিক্সজি, সেভেনজি যাই আসুক, কোনটির ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না।’

দেশের ফাইভজি চালু হলে ব্যবহার করতে ইচ্ছুকদের তাদের মোবাইল ফোন সেট পরিবর্তন করতে হবে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার হচ্ছে, ফাইভজির ক্ষেত্রে এটি চলবে না। এ কারণে ফাইভজি সেট ব্যবহার করতে হবে। এখন আমরা যেটা চালু করছি এতে সিম বদলাতে হবে না। সে ক্ষেত্রে সিম কেনার জন্য গ্রাহককে বাড়তি টাকা দিতে হবে না, তবে সেট আপডেট করতে হবে।

‘ফাইভজি সেটের দাম বেশি, এটা সত্যি কথা। আমরা এরই মধ্যে দেশে যারা ফোনসেট উৎপাদন করে তাদের সাথে কথা বলেছি যাতে করে ফাইভজি সেট মোটামুটি মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে থাকে। আমরা গরিব মানুষের হাতের নাগালে আনব, এটা আশা করি না; ফিচার ফোনের দামে নিতে পারব, এটা আশা করি না, কিন্তু মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে যেন থাকে, আমরা সে চেষ্টা করছি।’

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সেট উৎপাদন করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ফাইভজি সেট কিন্তু উৎপাদিত হয়; স্যামস্যাং উৎপাদন করে। বিদেশেও রপ্তানি করে। আমাদের দেশীয় কোম্পানি যেগুলো প্রোডাকশনে আছে, তাদের আমরা অনুরোধ করেছি। তারা উৎপাদনে যাবে। মার্চের ভেতরে সেটগুলো বাজারে আসবে।

‘আমাদের ফাইভজির টোটাল ব্যান্ডইউথ হচ্ছে ৪৬০ মেগাহার্টজ। এর মধ্যে টেলিটক ব্যবহার করছে ৬০ মেগাহার্টজ। টেলিটকের ব্যান্ডউইথের জন্য বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেছেন, তারা ব্যবহার করুক। এই মুহূর্তে তাদের পয়সা দিতে হবে না। বাকি যেটা আছে, সেটা মার্চ মাসে অন্যদের মাঝে নিলাম করব।’

ফাইভজি প্রযুক্তি শিল্প খাতে বেশি কাজে লাগবে বলেও মনে করেন জব্বার। তিনি বলেন, ‘ফাইভজি সেটের মাধ্যমেই যে ফাইভজি প্রযুক্তি ব্যবহার করব, তা নয়। একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। বাড়ির লাইট, ফ্যান, টিভি এগুলো যদি আপনি দূর নিয়ন্ত্রণ করতে চান, অফিসে বসে এগুলো চালু করবেন বা বন্ধ করবেন, ফাইভ জি দিয়ে এটি করা যাবে। এর জন্য কিন্তু বাড়িতে একটি মডেম লাগবে, ফাইভজি মডেম।

‘অতএব ফাইভজি শুধু সেটের ওপর নির্ভরশীল না। ফাইভজির জন্য আরও বহু ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি ফেসবুক ব্রাউজ করতে চান বা ইউটিউব ভিডিও দেখতে চান, তাহলে কিন্তু ফাইভজি লাগবে না, ফোরজি দিয়েই করা যাবে। ফাইভজিকে বলেছি, এটা পৃথিবীজুড়েই ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট হিসেবে ফাস্ট হয়, কনজ্যুমার লেভেল পর্যন্ত যেতে একটু সময় লাগে। আমরা এ জন্যই অর্থনৈতিক এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছি, তবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট, ভয়েস কল এগুলোর জন্য অনেকেই হয়তো ফাইভজি সেট ব্যবহার করতে পারবেন, যারা অ্যাফোর্ড করতে (কিনতে) পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘ফাইভজি ব্যবহার করলে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে। ফোরজির সর্বোচ্চ গতি উঠতে পাবে ফোর জিপিএস। আর ফাইভজিতে এটি ২০ জিপিএস। তাহলে বুঝতেই পারছেন গতিটা ৫ গুণ বেশি।

‘আপনি হয়তো কিছু ডাউনলোড করছেন। যে পরিমাণ সময় এখন লাগে, সেটা একবারে ম্যাক্রো লেভেলে চলে আসবে। হয়তো একটি সিনেমা ডাউনলোড করতে ১ মিনিটও লাগবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, ‘ফাইভজি ব্যবহার করতে হলে নতুন সেট লাগবে। একটি বিষয় খেয়াল করবেন, এই ফাইভজি কারা ব্যবহার করবে। এটির জন্য নির্ধারিত প্রযুক্তি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্সসহ অন্যান্য কাজের।

‘এই ধরনের কাজগুলো কয়জন করেন? কতজন মানুষ এই প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হবেন সেটিও মাথায় রাখবেন; সেটিও মাথায় রাখতে হবে।’

ফাইভজি চালু হলে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে দেশে।

১. ডাউনলোড স্পিড

ফাইভজিতে প্রতি সেকেন্ডে ডাউনলোড স্পিড ১০ থেকে ৫০ গিগাবাইট। ফোরজিতে এই গতি ১০ থেকে ২০ মেগাবাইট। অর্থাৎ ফোরজির চেয়ে ফাইভজির গতি ১০০ থেকে ২৫০ পর্যন্ত গুণ বেশি। এ গতিতে নেটফ্লিক্সে ৮কে রেজুলেশনের ৪০০ সিনেমা একবারে দেখা যাবে।

২. ল্যাটেন্সি কম

তথ্য আদান-প্রদানে সময়ের ব্যবধানই ল্যাটেন্সি। ফাইভজিতে এই ল্যাটেন্সি রেট অনেক কম। ফোরজি তথ্য পাঠায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিসেকেন্ডের ভেতর। ফাইভজি এই সময় কমিয়ে আনবে ১ মিলিসেকেন্ডে। ফলে কাঙ্ক্ষিত তথ্য মিলবে রিয়েল টাইমে।

৩. স্বয়ংক্রিয় গাড়ি

স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ফাইভজি ব্যবহার করে, ট্রাফিক সিগন্যাল ও রোড সেন্সরের সঙ্গে সমন্বয় করবে। রাস্তার অন্য গাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারবে। একটি ঘটনায় মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখাতে সময় লাগে ২০০ মিলিসেকেন্ড। ফাইভজি নেটওয়ার্কে প্রতিক্রিয়া দেখাতে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সময় লাগবে ১ মিলিসেকেন্ড। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।

৪. যানবাহন চালানো

আগামী দিনে স্বয়ংক্রিয় বা দূর নিয়ন্ত্রিত ট্রেন, ডেলিভারি ট্রাক ও প্লেন চালাতেও ফাইভজি একই সুবিধা দেবে।

৫. রোবট দিয়ে অস্ত্রোপচার

শুধু যানবাহন নয়, বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকেও রোবোটিক ডিভাইস দিয়ে অস্ত্রোপচার সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞ সার্জনরা রোবট দিয়েই জরুরি অবস্থায় সময় ও দূরত্ব কমাতে পারবেন।

৬. রোবটের কাজ

ফাইভজির কারণে ফ্যাক্টরিতে রোবটের সংখ্যাও বাড়বে। তারা একে অন্যকে নিজেদের কাজ ও স্থান সম্পর্কে জানাতে পারবে। এতে তাদের সক্ষমতা আরও বাড়বে।

৭. ড্রোন দিয়ে কৃষিকাজ

ড্রোনের বহর দিয়ে কৃষিকাজও হবে। দূর নিয়ন্ত্রিত ড্রোন দিয়ে ফসল বাছাই করে তোলা যাবে। সার ও পানি দেয়াও সম্ভব হবে।

৮. ভিআর গেইমিং

ভিআর হেডসেট পরে রিয়েলটাই্মে খেলা যাবে জনপ্রিয় গেম ফোর্ট নাইট, ব্যাটেল রয়েল ও পাবজি। ল্যাগের কারণে কোনো বাধাও আসবে না। ফাইভজি ব্যবহারে পিসি ও গেমিং কনসোল থেকে সফটওয়্যার সরিয়ে ক্লাউডে রাখা যাবে। ক্লাউড সেবা নিলে দিতে হবে সাবস্ক্রিপশন ফি। এতে গেমারদের আর দামি ডিভাইস কিনতে হবে না।

৯. এআর

অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। ফলে ভার্চুয়াল অনেক কিছু আমরা আমাদের আশপাশেই দেখতে পারব।

১০. পণ্য ডেলিভারি

ই-কমার্স ও কুরিয়ার কোম্পানিগুলো ড্রোন দিয়েই পণ্য ডেলিভারি দেবে। আগামী দিনে বাড়ির দরজায় পণ্য নিয়ে হাজির হবে ড্রোন।

১১. আইওটি

স্মার্টহোমে ব্যবহৃত ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসগুলো সর্বক্ষণ ফাইভজিতে যুক্ত থাকবে। ল্যাটেন্সি রেট কম বলে এতদিন ফোরজি দিয়ে রিয়েলটাইমে আইওটি ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ছিল না। এই সমস্যা এড়ানো যাবে ফাইভজিতে। সব আইওটি ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে রিয়েল টাইমে।

পরীক্ষামূলক ফাইভজি কি ডিসেম্বরে সম্ভব

প্রকল্পটির পুরো নাম ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় টেলিটকের নেটওয়ার্কে বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষামূলক ফাইভজি প্রযুক্তি চালুকরণ’। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পের প্রস্তাবনা নিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হয়। এতে প্রকল্পটির বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

এসব বিষয়সহ প্রস্তাবনাটি (ডিপিপি) পরিবর্তনের জন্য টেলিটকের কাছে পাঠানো হয়েছে। টেলিটক তা এখনও পরিকল্পনা কমিশনে ফেরত পাঠায়নি।

টেলিটক প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশোধন করে পাঠালে তা নিয়ে আবারও মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হবে। প্রস্তাবে সব কিছু সন্তোষজনক থাকলে তবেই তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হবে।

তবে এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এই প্রকল্পে খরচ হবে ২৫৪ কোটি ৮ লাখ টাকা।

বিষয়টি নিয়ে কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ডিপিপি পুনর্গঠনের জন্য পাঠিয়েছি, কিন্তু তা এখনও আসেনি। পুনর্গঠিত প্রস্তাবনা এলে তার ওপর বৈঠক শেষে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হয়ে তবে তা অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।

‘তবে প্রস্তাবে কোনো অসংগতি পেলে তা আবার সংশোধনের জন্য টেলিটকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে অনুমোদন পেতে দুই মাস বা এমনকি তিন মাসও লাগতে পারে।’

কমিশন বলছে, একনেকে অনুমোদন পেলেই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায় না। প্রকল্প অনুমোদন পেলেও তাকে আরও কিছু ধাপ পার হতে হয়। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটা করা হবে, যার মধ্যে থাকবে ফাইভ-জির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।

তা ছাড়া এ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দও থাকতে হবে। তার জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সংশোধনী (সংশোধিত এডিপি) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এডিপি সংশোধন হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে। যন্ত্রপাতি কেনার পর তা স্থাপন করতে হবে।

দেশে ফাইভজির কোনো সরঞ্জাম নেই বলে জানিয়েছে টেলিটক।

এ বিভাগের আরো খবর