বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দ্বীপ এবং কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার সনি হত্যা মামলার বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের পরিবার চাইলে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রাসাদ মজুমদার।
সনি ও দ্বীপ হত্যা এবং তার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলার সময় শুক্রবার উপাচার্য নিউজবাংলাকে এসব কথা বলেন।
সত্য প্রাসাদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লিগ্যাল সাইট আছে। সনি ও দ্বীপ হত্যা মামলায় আমাদের কিছু করণীয় আছে কিনা দেখার জন্য আমি তাদের মামলাগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলেছি।’
বুয়েটের বিশাল অঙ্কের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে ২০০২ সালের ৮ জুন মোকাম্মেল হায়াত খান মুকির নেতৃত্বে বুয়েট ছাত্রদলের একটা গ্রুপের সঙ্গে গোলাগুলি শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের আরেক টগর গ্রুপের সঙ্গে।
অবিরাম গুলিবর্ষণের মধ্যে পড়ে আহসান উল্লাহ হলের সামনে বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের (৯৯ ব্যাচ) ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
দীর্ঘ দেড় যুগেও সনির হত্যাকারীদের শাস্তি হয়নি। হাইকোর্টে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে।
হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির বিরোধিতা করার অভিযোগে ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও বুয়েট ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ রায়হান দ্বীপকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ইসলাম হলের সামনে কোপানো হয়।
প্রায় তিন মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে একই বছরের ২ জুলাই মারা যান দ্বীপ।
এ ঘটনায় হেফাজত কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মেজবাহউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সে সময় মেজবাহ জানান, ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে আসা লোকজনকে খাবার সরবরাহ করায় একটি হলের মসজিদের ইমামকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছিলেন দ্বীপ ও তার বন্ধুরা। এ জন্যই তিনি দ্বীপের ওপর হামলা চালান।
দ্বীপের মৃত্যুর ঘটনায় সে সময় চকবাজার থানায় তার ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
মামলাটির সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিলেও সেটি জানা যায়নি।
৮ ডিসেম্বর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়। আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ মামলার সম্পূর্ণ খরচ বহন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, মামলায় গত ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের প্রায় ৫৫ লাখ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া আবরার ফাহাদের পরিবারকে প্রতিমাসে ৭৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।
আড়াই বছরের মধ্যেই আবরার হত্যার রায় হলেও এতোবছর পরও সনি ও দ্বীপ হত্যার বিচার না হওয়ায় আবরার হত্যার রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
৫৫ লাখ টাকার বিষয়টি সামনে এনে সনি ও দ্বীপ হত্যা মামলার জন্য বুয়েট প্রশাসন কত টাকা খরচ করেছেন সে প্রশ্নও তুলছেন তারা।
আবরার হত্যার রায়ের পর গত বৃহস্পতিবার এক সমাবেশে দ্বীপ হত্যা মামলার কী অবস্থা জানতে চান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘একই দেশে একটি ছাত্র সংগঠনের জন্য একটি আইন, আরেকটি ছাত্র সংগঠনের জন্য আরেকটি আইন কেন হবে।'
সামগ্রিক বিষয় নিয়েই বুয়েট উপাচার্যের কাছে জানতে চাওয়া হলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘তখনকার উপাচার্য সে সময়ের সরকারের আমলে পদক্ষেপ নেয়নি। সেখানে আমাদের কী করার আছে? এখন সেটি বিচার বিভাগের ব্যাপার। আবরার হত্যার বিচারের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি, সেটি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই সনি ও দ্বীপ হত্যার বিচার হোক। আমরা এখন এসব মামলার সর্বশেষ অবস্থা কী সেটি জানার জন্য চেষ্টা করছি। সেসব তথ্য বের করে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলাগুলো আরেকটু হ্যান্ডেল করা যায় কিনা দেখব, যাতে বিচারটা হয়।’
উপাচার্য বলেন, ‘সনি ও দ্বীপ হত্যা মামলার বিষয়ে যদি আমাদের সাথে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হতো তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। কিন্তু আমি উপাচার্য হিসেবে যোগ দেয়ার পর এ জিনিসটা নিয়ে কেউ আামাদের কাছে আসেনি। এখন শিক্ষার্থীরা বা তাদের পরিবার সহযোগিতা চাইলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব। আমরা চাই এসবের বিচার হোক।’
দ্বীপ এবং সনি হত্যার বিচার না হওয়াতে একের পর এক এই অঘটনগুলো ঘটে যাচ্ছে বলেও মনে করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘বিচারগুলো হলে অপরাধীরা সতর্ক হয়ে যেত।’
সনি ও দ্বীপ হত্যা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘যখন আবরার মারা যায় তখন শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি ছিল। তার মধ্যে মামলার খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করা এবং তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া। এই দুই দাবির প্রেক্ষিতে মামলার খরচ এবং আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেসময় (সনি ও দ্বীপ) এ ধরনের কোন দাবি ছিল না।’
তবে ভুক্তভোগীদের পরিবার বা শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানান মিজানুর রহমান।