বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ট্রেনের টিকিট: কালোবাজারির আয় সরকারের কাছাকাছি?

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:৪০

কিশোরগঞ্জে কাউন্টারে বা অনলাইনে ট্রেনের টিকিট মেলে না বললেই চলে। কালোবাজারে দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি দামে কেনা ছাড়া উপায় নেই। স্টেশনে বা পাশে প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় সে টিকিট। এমনকি রেলের কর্মীরাও করে বিক্রি। সিংগভাগ টিকিটই কালোবাজার থেকে কিনতে হয় বলে টিকিটের জন্য সরকার যে টাকা পায়, কালোবাজারিদের সম্মিলিত আয়ও তার কাছাকাছিই হয়ে যায়। স্টেশন মাস্টারের দাবি, কারা কালোবাজারি, তারা তা জানেন না।

খাদিমুল ইসলাম শুভ কিশোরগঞ্জ থেকে যাবেন ঢাকায়। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেও দেখেন ৪৫টি টিকিট আছে। কিন্তু সেই টিকিটও কাটার চেষ্টা করে পারেননি। ৮টার সময় অ্যাপে অর্ডার দেয়ার চেষ্টা করতেই দেখেন একটি টিকিটও নেই।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সার্ভার ডাউন দেখাচ্ছিল। তাও বারবার চেষ্টা করছিলাম। যখন সার্ভার এলো, তখন দেখাল কোনো টিকিট নেই। কিন্তু সার্ভার ডাউন দেখানোর পর টিকিট কীভাবে বিক্রি হলো, কিছুই বুঝলাম না।’

এরপর শুভ স্টেশনে গিয়ে ঠিকই টিকিট পান। তবে সেটি কাউন্টারে নয়, এক দালালের কাছে। শোভন শ্রেণির টিকিটের দাম ১২৫ টাকা হলেও তাকে দ্বিগুণ দামে নিতে হয় ২৫০ টাকায়।

খান তুহিন সপরিবারে ঢাকায় এসেছেন। তিনি এসেছেন শোভন চেয়ারে। টিকিটের দাম ১৫০ টাকা। কিন্তু তিনি দুটি কিনেছেন ৩০০ টাকা করে।

অনলাইনে টিকিট না পেয়ে প্রথমে যান কাউন্টারে, সেখানে না পেয়ে ‘সাবু’ নামে পরিচিত এক কালোবাজারির কাছ থেকে টিকিট নেন।

কিছুদিন আগেও কালোবাজারে টিকিটের দাম ছিল বড়জোর ২৫০ টাকা। ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে বাসভাড়া বেড়ে যাওয়ার পর কালোবাজারিরাও এখন বেশি টাকা নিচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে ট্রেন ছাড়ার আগে আগে বিশেষ করে খাবার রুমের স্টাফদের কাছেও টিকিট পাওয়া যায়। দিতে হয় কখনও দ্বিগুণ, কখনও তার চেয়ে বেশি দাম।

তুহিন নিজেও একাধিকবার ট্রেন ছাড়ার আগে বা আগের দিন গভীর রাতে টিকিট নিয়ে এসেছেন খাবার ট্রেনের কর্মীদের কাছ থেকে।

এভাবে বেশিরভাগ যাত্রীকেই টিকিট কিনতে হয় কালোবাজারে। এভাবে দেখা যায়, রেলের আয় যত, কালোবাজারি বা ট্রেনের কর্মীদের অবৈধভাবে টিকিট বিক্রির সম্মিলিত আয় তার চেয়ে কম নয়।

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে তিনটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এগারোসিন্ধুর প্রভাতী, এগারোসিন্ধুর গোধূলী ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস। তিনটি ট্রেনের টিকিট কাটতে গেলেই একই চিত্র দেখা যায়।

স্থানীয় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, প্রভাবশালী রাজনীতিক বা গণমাধ্যমকর্মীদের একাংশ ছাড়া সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে এখন স্বাভাবিক নিয়মে টিকিট পাওয়া প্রায় অনিশ্চিতই হয়ে গেছে।

এই বিষয়গুলো এখন আর গোপন নেই। রেলওয়ে পুলিশ কখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আর নিজেদের কর্মীরাই যেখানে জড়িত, সেখানে ব্যবস্থা নেয়া আদৌ সম্ভব কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা।

কিশোরগঞ্জকেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে ক্ষোভ ঝাড়ছেন নিয়মিত। মাসুদ রহমান নামে একজন লেখেন, ‘শুধু কিশোরগঞ্জে না এমন অবস্থা চলছে বাজিতপুরেও। কে আছে এগুলো দেখার? ১০৫ টাকার টিকেট ৩৫০ টাকা।’

নোমান আবদুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, ‘ঢাকা থেকে এক দিন আগেও টিকিট পাওয়া যায়, অনলাইন বা অফলাইনে। আর কিশোরগঞ্জ থেকে তিন দিন আগেও টিকিট পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়।’

সৌরভ সরকার নামে একজন লিখেছেন, ‘গত ৫ থেকে ৭ বছর ধরে শুধু দালালদের দৌরাত্ম্যই দেখে আসছি! কেউ কি নাই এগুলো দেখার?’

শাহিন সামাদ নামে একজন লেখেন, ‘একজনে দুটির বেশি টিকিট পায় না। আর ব্লাকাররা কাউন্টারের সামনে ১৫ থেকে ২০ টা টিকিট বিক্রি করে।’

আসিফ নঈম নামের এক যাত্রী জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব পর্যন্ত প্রতিটা স্টেশনে টিকিট কালোবাজারি হয়ে থাকে। তার অভিযোগ, প্রতিটি স্টেশনের কর্মীরাই এর সঙ্গে জড়িত। তিন দিন আগে টিকিট কাটতে গেলে টিকিট পাবেন না। কিন্তু ১০০ টাকার টিকিট ৩০০ টাকা দিলে ট্রেন ছাড়ার ৩০ মিনিট আগেও টিকিট পাওয়া যায়।

আরেক ভুক্তভোগী মশিউর রহমান ১৫০ টাকা করে দুটি টিকিট কিনেছেন দ্বিগুণ দামে ৬০০ টাকায়।

তিনি বলেন, ‘কাউন্টারে গিয়ে টিকিট পাওয়া যায় না। যার কাছ থেকে টিকিট নিলাম, তার কাছে ৩০ থেকে ৪০টি টিকিট দেখলাম।’

সেই ব্যক্তি স্টেশনের পাশে একটি প্রতিষ্ঠানের নৈশপ্রহরী বলে জানান মশিউর। বলেন, ‘আমার কথা হলো, একজনের কাছে এত টিকিট কীভাবে যায়? এটা কীভাবে সম্ভব? অবশ্যই এর সঙ্গে রেলের কর্মীদের সম্পৃক্ততা আছে।’

তবে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। যাত্রীরা নিয়মিত কাউন্টারে এসে টিকিট পাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ইউসুফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেনে ভ্রমণের জন্য যে পরিমাণ যাত্রী আসেন, টিকিটের বরাদ্দ সে পরিমাণে নাই। যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। যার ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান।’

কালোবাজারিদের কাছ থেকে যাত্রীদের টিকিট কেনার নানা কাহিনি তুলে ধরলে তার কথা পাল্টে যায়। তখন তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন কৌশলে সাধারণ যাত্রীবেশে লাইনে লোক দাঁড় করিয়ে টিকিট নিতে পারে, আবার অনলাইনেও টিকিট সংগ্রহ করতে পারে। অনেক সময় তারা বিভিন্ন রিকশাচালককে কিছু টাকা দিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়েও টিকিট সংগ্রহ করে নেয়। এসব ক্ষেত্রে আসলে কে কালোবাজারি, কে সাধারণ যাত্রী তাদের শনাক্ত করার উপায় থাকে না।’

এ বিভাগের আরো খবর