‘বাংলাদেশ একটি অনুপ্রেরণামূলক উন্নয়ন সাফল্যের গল্প’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শ্যাফার। এক সপ্তাহের ঢাকা সফর শেষে ওয়াশিংটন ফিরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশকে নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।
শ্যাফার বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এবং দেশটির অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা অবাক করার মতো। বেশ কয়েক বছর ধরে ভালো জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে দেশটি। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। বেশ ভালোভাবেই করোনা মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
‘সে কারণেই বলছি, বাংলাদেশ একটি অনুপ্রেরণামূলক উন্নয়ন সাফল্যের গল্প। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য কাজ করছে। এই লক্ষ্য অর্জনের পথে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রতিটি পদক্ষেপে পাশে থাকবে; দেশটির জনগণের পাশে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য আরও সবুজ, আরও স্থিতিস্থাপক এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’
গত ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শ্যাফার। সফরকালে তিনি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শুক্রবার সকালে বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন হার্টউইগ শ্যাফার। ঢাকা সফরকালে তিনি পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। হার্টউইগ শ্যাফারের বাংলাদেশে ষষ্ঠ সফর ছিল এটি।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হার্টউইগ শ্যাফার কোভিড-১৯ মহামারি থেকে বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পুনরুদ্ধারের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুতি সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন।
তিনি কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। সম্প্রতি কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্তিশালী ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
হার্টউইগ শ্যাফার বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এবং অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা লক্ষণীয়। কোভিড-১৯ মহামারি দেশটিকে কঠোরভাবে আঘাত করেছে; তবে সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপগুলো ভাইরাসটিকে মোকাবিলা করেছে এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে একটি টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে থাকতে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, এ জন্য শক্তিশালী সরকারি প্রতিষ্ঠান, একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাত, অনুকুল ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং একটি দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার জন্য সময়োপযোগী নীতিগত পদক্ষেপের প্রয়োজন। একই সাথে জোর দিতে হবে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার ওপর।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি নতুন কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক (সিপিএফ) তৈরির কাজ শুরুর করেছে। যা ২০২৩- থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত দেশটিকে তার সহায়তার নির্দেশনা দেবে। এই সিপিএফ সরকার, বেসরকারিখাত এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং উন্নয়ন অংশীদারদের আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ করে প্রণয়ন করা হবে।
ঢাকা সফরকালে বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট সরকার এবং অন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকার এবং বিশ্বব্যাংক কীভাবে টেকসই উপায়ে এগুলোকে সহায়তা করতে পারে-সে সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
হার্টউইগ শ্যাফার বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অনুপ্রেরণামূলক উন্নয়ন সাফল্যের গল্প। যেহেতু দেশটি ২০৩০ সালে সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য কাজ করছে। বিশ্বব্যাংক সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে প্রতিটি পদক্ষেপে থাকবে, যা দেশটির জনগণের জন্য আরও সবুজ, আরও স্থিতিস্থাপক এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।’
সফরকালে শ্যাফার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান দুটি প্রকল্প পরিদর্শন করেন। ভৈরবে তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাথে দেখা করেন, যারা তাদের জুতা তৈরির ব্যবসায় পরিষ্কার প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এই প্রকল্পে ৪০ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা তাদের ছোট ব্যবসা বৃদ্ধি এবং তাদের আয় বৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছেন। পাশাপাশি সবুজ ও পরিচ্ছন্ন উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।
বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট আশুগঞ্জে একটি আধুনিক স্টিল সাইলো কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে আটটি আধুনিক স্টিল সাইলো কমপ্লেক্স (খাদ্য গুদাম) নির্মাণে সহায়তা করছে। এই সাইলোগুলো ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল এবং গম পুষ্টির গুণমান বজায় রেখে তিন বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারে।
শ্যাফার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ব্র্যাক এবং ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ল' অটোমোবাইল (এফআইএ) আয়োজিত সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক একটি আলোচনা সভাতেও যোগ দিয়েছিলেন।