সড়কে যন্ত্রদানব কেড়ে নিয়েছে প্রাণের সন্তান। এবার দায়ীদের শাস্তির দাবিতে অন্য অনেকের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছেন সন্তানহারা মা-বাবাও। সন্তান হত্যার বিচার দাবিতে শুক্রবার শহীদ মিনারের সমাবেশে সোচ্চার হলেন তারা। কাঁদলেন বুকের ধন হারিয়ে যাওয়ার বেদনায়।
সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর বিচার, ক্ষতিপূরণসহ নয় দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুক্রবার সমাবেশ করেছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এই সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে নয় দফা দাবি তুলে ধরেছে।
‘সড়কে স্বজনহারাদের সমাবেশ’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাড়াও সড়কে প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীদের মা-বাবাসহ অন্য স্বজনরা বক্তব্য দেন। একপর্যায়ে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সড়কে প্রাণ হারানো সাইফুল ইসলামের বাবা শাহজাহান কবির বলেন, ‘দুই বছর আগে একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছি। আজ পর্যন্ত ওই হত্যার বিচার পাইনি। অথচ ঘাতক সেই গাড়িচালক দিব্যি রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব দপ্তরে গিয়েছি। কিন্তু আমি বিচার পাইনি। কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণও পাইনি।’
বক্তব্য দিতে গিয়ে একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাইফুল ইসলামের মা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই; আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
সাইফুল ইসলামের বোন বলেন, ‘আমার ভাইসহ সড়কে মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আর কারও ভাই, ছেলে বা মেয়েকে যেন সড়কে বেপরোয়া গাড়ির চাকায় প্রাণ দিতে প্না হয় সে নিশ্চয়তা চাই।’
আন্দোলনের সমন্বয়ক মঈদুল ইসলাম দাউদ বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বরং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
সমাবেশ থেকে আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে নয় দফা দাবি বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় সচিবালয়ের সামনেসহ সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি:
১. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শিক্ষার্থীসহ সব সড়ক-হত্যার বিচার ও পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. ঢাকাসহ সারা দেশে সব গণপরিবহনে (সড়ক, নৌ, রেল ও মেট্রোরেল) শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৩. গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য যথাস্থানে ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপত্তাব্যবস্থা দ্রুততর সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৫. পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং স্পেস নির্মাণ এবং এসবের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৬. দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা মহলকে নিতে হবে।
৭. যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনতে হবে এবং বিআরটিএর সব কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি ও তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অবিলম্বে স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. ট্রাফিক আইনের প্রতি জনসচেতনতা বাড়াতে বিষয়টিকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হবে।