পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা দিন আরামের পরশ বোলাচ্ছে না এই সময়। বরং স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ত্বকে অস্বস্তিই তৈরি করছে।
তীব্র গরমের অনুভূতি অবশ্য নেই। তবে রোদের সময় বাড়ির বাইরে গেলে যে আরামদায়ক অনুভূতি থাকাটা স্বাভাবিক ছিল, সেটা নেই। রাজধানীতে রাতের ঘুমের আরামের জন্য ফ্যানের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে এখনও।
অগ্রহায়ণের শেষ সপ্তাহে আজকের এই দিনে ঢাকায় স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। কিন্তু এবার সেই তাপমাত্রা ২০ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
গত ছয় বছরে কখনও কখনও এই সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা দেখা গেছে। কিন্তু এতটা বেশি দেখা যায়নি কখনও।
গত বছর আজকের এই দিনে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ২০১৯ সালে তা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তারও আগের বছর এই দিনে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ২০১৬ সালে ছিল ১৬ ডিগ্রি। কেবল মাঝে ২০১৭ সালে একটি বছর বর্তমানের মতোই অস্বাভাবিক বেশি তাপমাত্রা ছিল, তবে তা এবারের চেয়ে কম; ১৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি।
নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই সাধারণত শীতের আগমনী বার্তা শুরু হয়। কিন্তু এবার ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পার হলেও শীতের দেখা নেই।
উত্তরের জনপদ, যেগুলো বছরের এই সময়ে ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত থেকে কাঁপুনি আনে শরীরে, সেই সময়েও প্রত্যাশিত শীতের দেখা নেই। গরম কাপড় ছাড়াই চলাফেরা করছে মানুষ।
বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এই বিক্রেতাকে দেখা গেল পণ্য বিক্রি করতে। অন্যান্য বছর এই সময় গরমের পোশাক পরেই আসতেন তিনি। তবে এবার সে তাগিদ অনুভব করছেন না
ডিসেম্বরের এই দ্বিতীয় সপ্তাহেও শীত অনূভূত না হওয়ার কারণ হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবকে তুলে ধরেছেন আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু দিন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকায় ভারি বর্ষণ হয়েছে। এর ফলে আকাশে প্রচুর মেঘের সৃষ্টি হয়। আকাশে মেঘ থাকলে আর্দ্রতার কারণে স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা বেড়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ ঢাকার তাপমাত্রা ২০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় এই সময়ে ঢাকার গড় তাপমাত্রা থাকে ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীত আসতে কমপক্ষে আরও এক সপ্তাহ লাগবে বলেও জানান নাজমুল। বলেন, ‘আশা করছি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। এর পরই পর্যাপ্ত শীত অনুভূত হবে।’
গত ৬ ডিসেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়। এর আগের কয়েক দিন রীতিমতো ঘর্মাক্ত দিন গেছে রাজধানীবাসীর।
ঝড়ের প্রভাবে যে তিন দিন বৃষ্টি ছিল, সে সময় গরমের ভাপটা উবে গিয়েছিল বটে, তবে বৃষ্টি থেমে যেতেই আবার ধীরে ধীরে ফিরে আসে তা।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস হিসেবে বলা হয়েছে, রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে, কিন্তু দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
জানানো হয়েছে এই সময়ে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।