স্থায়ী ঠিকানার ‘ভুল তথ্য’ দেয়ায় পুলিশের কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পাওয়া আছপিয়া ইসলামের বিষণ্নতার খবর ছুঁয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনও। বরিশালের হিজলার এই তরুণীকে কনস্টেবলের চাকরি দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সেই সঙ্গে হিজলায় আছপিয়ার জন্য ঘর বানিয়ে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসীম উদ্দির হায়দার। তবে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, চাকরি দেয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা তার কাছে এখনও পৌঁছেনি।
ডিসি জসীম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আছপিয়ার বিষয়টি ওয়াকিবহাল রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জমিসহ ঘর নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নে আছপিয়ার পরিবার যেখানে থাকে, সেখানেই খাস জমি খোঁজ করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। পুলিশ বিভাগকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে আছপিয়ার চাকরি নিশ্চিত করার জন্য।’
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘আছপিয়ার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যার আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আছপিয়াকে কার্যালয়ে ডেকে বিস্তারিত জেনেছি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় তার পরিবারকে ঘর ও জমি দ্রুত সময়ের মধ্যে দেয়া হবে।’
তবে এসপি মারুফ জানান, চাকরি নিশ্চিত সংক্রান্ত কোনো চিঠি বা নির্দেশনা তিনি পাননি।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো আছপিয়াকে বাদ দিইনি, কিন্তু ও ভাবছে ওকে বাদ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, এখনও অনেক কিছু বাকি।’
এদিকে পুলিশে চাকরি হয়েছে এমন তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লেও বিষয়টি গুজব বলেছেন আছপিয়া।
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে বিভিন্ন স্থানে আমার চাকরি হয়েছে এমন পোস্ট দেখেছি। শুনেছি সাইবার ৭১ নামের একটি আইডি থেকে আমার চাকরি হয়েছে এমন পোস্ট দেয়া হয়েছে। তবে আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। চাকরি হয়েছে কি না সেই সংশ্লিষ্ট কোনো চিঠি বা খবর আমাকে জানানো হয়নি।’
বরিশাল পুলিশ লাইনসের বাইরে অপেক্ষায় থাকা আছপিয়ার এই ছবি ভাইরাল হয় ফেসবুকে।যেভাবে ভাইরাল আছপিয়া
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব ধাপ পেরোলেও সবশেষ ধাপ পুলিশ ভেরিফিকেশনে গিয়ে আছপিয়ার হাত থেকে ছুটে যায় পুলিশ কনস্টেবলের পদ।
পুলিশ লাইনসের ফটকের সামনে বুধবার সকালে বিষণ্ন মুখে অপেক্ষায় বসে থাকা আছপিয়ার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাম্পাস টাইমস নামে একটি পেজ। ওই পোস্টে বলা হয়, সব ধাপে পাস করার পরও কেন চাকরি হবে না সে প্রশ্ন করলে ডিআইজি এস এম আকতারুজ্জামান আছপিয়াকে জানান, নিজেদের জমি না থাকলে চাকরি দেয়ার আইন নেই।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, জমি না থাকায় চাকরি হয়নি এই অভিযোগ সত্য নয়। স্থায়ী ঠিকানার তথ্য ভেরিফিকেশনে যাচাই হয়নি বলে বিধি অনুযায়ীই তার চাকরি হয়নি।
ডিআইজি বলেন, ‘আছপিয়া বরিশালে তার স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করতে পারছেন না। বিধি মোতাবেকই পুলিশ কাজ করবে। মেয়েটির প্রতি কষ্টবোধ থেকেই যায়। তিনি হয়তো না বুঝেই ভেরিফিকেশন ফরমে ভুল করেছেন।’
পুলিশ ভেরিফেকেশনের দায়িত্বে থাকা হিজলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্বাস উদ্দিন জানান, আছপিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা হিজলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাদের দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়, সেখানে তাদের জমি আছে। তিনি যে তথ্য পেয়েছেন, সেগুলোই জমা দেয়া হয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইকবাল হোছাইন বলেন, ‘চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী যে জেলা থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দেবেন, সে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আছপিয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।’
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও নির্বাচন পদ্ধতির ৪.৬ নম্বর পয়েন্টে উল্লেখ আছে, ভেরিফিকেশনের ফরমে তথ্য গোপন বা মিথ্যা তথ্য দিলে পরের ধাপে আবেদনকারীকে নেয়া হবে না।
হিজলায় আছপিয়ার আত্মীয় আব্দুল হামিদ জানান, আছপিয়ার দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশ্যনে, বাবা শফিকুল ইসলাম প্রায় তিন দশক আগে কাজের সন্ধানে হিজলায় যান। হিজলা উপজেলা সদরে একটি ভাড়া বাড়িতে সংসার গড়েন। সেখানেই জন্ম আছপিয়ার। ২০১৯ সালে শফিকুলের মৃত্যু হয়। এরপর আছপিয়া ও তার পরিবার এখন হিজলার খুন্না-গোবিন্দপুর ইউনিয়নে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
ভোলার বাড়ির বিষয়টি ভেরিফিকেশন ফরমে কেন উল্লেখ করেননি জানতে চাইলে আছপিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকে হিজলায়। ভোলায় কিছু আছে কি না আমি জানি না।’
তিনি জানান, ভেরিফিকেশন ফরমে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে খুন্না-গোবিন্দপুরের ভাড়া বাড়ির ঠিকানা দিয়েছেন।