আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভার সভাস্থলের বাইরে ১৯৭৭ সালে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের বিচারের নামে নির্বিচারে হত্যার অভিযোগ এনে তার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।
শুক্রবার গুলশানের লেক শোর হোটেলের বাইরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। আর হোটেলের ভেতরে বিএনপি করে আলোচনা সভা।
বিএনপির আলোচনার বিষয় ছিল ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’। এতে বর্তমান সরকারের আমলে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। দাবি করা হয়, সরকার দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছে। বিরোধী দলের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
সেমিনারে ‘ডিজেনফ্রেনচাইজমেন্ট আন্ডার দ্য অথোরেটিরিয়ান রেজিম’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ১৯৭৭ সালে চাকরিচ্যুত সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা এবং সেনা ও তাদের স্বজনরা।
বক্তারা বলেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর কথিত সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। বিদ্রোহ দমনের নামে সেনা ও বিমান বাহিনীর প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে ফাঁসি, ফায়ারিং স্কোয়াড ও টর্চার সেলে হত্যা করা হয়।
সহকর্মীকে হত্যা ও নিজের চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে এবং নিজেকে নির্দোষ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধনে এসেছেন বিমান বাহিনীর সে সময়ের সার্জেন্ট আব্দুল কাইয়ূম মাজহার।
তিনি জানান, তার জুনিয়র সায়েদুর রহমান মিয়াকে বিনা বিচারে গুলি করে মারা হয়। তার কোনো দোষ ছিল না সে সময়।
১৯৭৭ সালে জাপানের উগ্রপন্থি গোষ্ঠী ‘রেড আর্মি’র সদস্যরা জাপান এয়ারলাইনসের একটি বিমান ছিনতাই করে ঢাকা বিমানবন্দরে (বর্তমান পুরাতন বিমানবন্দর) অবতরণ করিয়েছিল। ওই ঘটনার অবসানের ব্যবস্থা নিতে তৎকালীন বিমান বাহিনীপ্রধানসহ বিমান বাহিনীর বিরাট একটা অংশ সার্বক্ষণিকভাবে কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
মানবাধিকার বিষয়ে হোটেল লেক শোরে বিএনপির সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন একজন
১ অক্টোবর যখন বিমান ছিনতাই ঘটনার অবসান ঘটে, সেই রাতে জিয়াউর রহমানের অনুগত বাহিনী ঢাকা সেনা ও বিমান বাহিনীর ছাউনিতে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। তারা শত শত ঘুমন্ত সৈনিককে ব্যারাক থেকে অস্ত্রের মুখে বের করে নিয়ে আসে এবং পরে তাদেরকেই অভ্যুত্থানের অভিযাগে ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যা করে।
সে সময় জিজ্ঞাসাবাদের নামে বিভিন্ন নির্যাতন কক্ষে নিমর্মভাবে পিটিয়ে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে শত শত সৈনিককে হত্যার অভিযোগ এনে স্বজনরা কয়েক মাস ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, অগণতি সেনা ও বিমান সদস্যদে ফাঁসি দেয়া ছাড়াও রামপুরা ঝিলে গুলি করে ফেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মোট সংখ্যাটি কত, সেটিও পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।
সে সময় বিমান বাহিনী থেকে যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, তাদের একজন আব্দুল কাইয়ূম মাজহার। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো দোষ ছিল না, তাহলে কী কারণে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হলো? আমরা কী দোষে দোষী সেটি জানি না।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জিয়াউর রহমান খাবার টেবিলে বসে একহাতে কাঁটা চামচ দিয়ে খাবার খেতেন, অন্য হাত দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ফাইলে সই করতেন। এমনকি ২৪ অক্টোবর লন্ডন যাওয়ার পথে বিমানবন্দরে সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে ফাঁসির আদেশে সই করেন।
ছয় দাবি
সাবেক বিমান ও সেনাসদস্যরা মোট ছয়টি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো:
# সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যারা সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের নির্দোষ ঘোষণা;
# যারা ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র্যাংকে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ সরকারি সকল প্রকার সুযোগ, সুবিধা প্রদান;
# যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা ও বিমানবাহিনী সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাদেরকে ‘শহীদ’ হিসেবে ঘোষণা করা এবং কবরস্থান চিহ্নিত করে কবরস্থানে নামসহ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা;
# সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে তাদের পোষ্যদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রদান;
# সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য যাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি-কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ;
# অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত করার অপরাধে জিয়াউর রহমানে মরণোত্তর বিচার।