চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিযোগিতামূলক, উদ্ভাবনী এবং দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হলে নিজেদের ঘাটতি খুঁজে বের করার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিগগির নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনগুলো আসছে, তার সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আয়োজিত ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলোশন অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় আসবে বিপ্লব। কিন্তু অটোমেশন সিস্টেমের কারণে প্রথাগত চাকরির প্রয়োজন কমে যাবে। আমাদের দেশে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি, যা অদক্ষতাকে নির্দেশ করে।
‘ফলে, কর্পোরেট ও বহুজাতিক সংস্থাগুলোতে বিশেষ করে কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে আমাদের চাকরির বাজারে বিদেশিরা আধিপত্য বিস্তার করছে। এতে দেশের অর্থ বাইরে যাওয়ার পথ সহজ হয়েছে।’
এগিয়ে যাওয়ার এখনই সময় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এমন বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিযোগিতামূলক, উদ্ভাবনী এবং দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হলে কোথায় ঘাটতি রয়েছে সেটা যেমন খুঁজে বের করতে হবে, তেমনি উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিগগিরই নতুন করে সাজাতে হবে।’
এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিশেষজ্ঞদের দেয়া পরামর্শ ও সুপারিশ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থানীয় ও বৈশ্বিক চাকরির বাজারের চাহিদা মেটাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে বলে আশা করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
‘কৃষি, অটোমেশন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ফ্রিল্যান্সিং এবং অন্যান্য অনেক খাতে আমরা ধাপে ধাপে উন্নতি করছি ঠিকই, কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েল র্যাঙ্কিংয়ে আরও জোর দিতে হবে।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে দৃঢ়ভাবে গ্রহণে আমাদের একে অপরের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় এসেছে। কারণ এর মধ্য দিয়ে আমাদের কাজের ধরন, জীবনযাপন, ভ্রমণসহ সবকিছুর দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রথম বিপ্লবটি বাষ্পইঞ্জিন নিয়ে, দ্বিতীয় বিপ্লবটি বিদ্যুৎ নিয়ে, তৃতীয়টি ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার কেন্দ্রিক। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে বুদ্ধিমত্তা যোগ করার মধ্য দিয়ে পুরো দৃশ্যপটকে বদলে দিচ্ছে।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ব্যবসা বাণিজ্য কোন পথে যাচ্ছে তা জানতে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। রোবটের ব্যবহার শুরু হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্প এবং শপিং সেন্টারে, মেশিন লার্নিং ব্যবহার করা হচ্ছে সিমুলেশনের জন্য, ইন্টারনেট অফ থিংস ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্ট কৃষিতে। ফাইভ-জি প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে বাণিজ্যের ধরনকে।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৯৩তম বৃহত্তম দেশ হলেও, জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম। তবে উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমাদের বাড়তি সুবিধা আছে। সেটা হল, আমাদের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ জুড়ে আছে কর্মজীবী মানুষ। যাদের বয়স ১৫ থেকে ৬৪ বছর।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে অনেকের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কার থাকলেও নতুন নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে চায়।
‘দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে শক্তিশালী করতে হলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের জনসংখ্যার বড় একটি অংশকে সুপ্রশিক্ষিত এবং দক্ষ কর্মীবাহিনীতে রূপান্তর করতে হবে।’
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে মিশ্র এবং অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে হাই-টেক, লো-টেক কিংবা প্রযুক্তি সেবার বাইরে থাকা মানুষদেরকে সংযুক্ত করার বিকল্প নেই বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি।
আব্দুল হামিদ বলেন, ‘গত দেড় বছরে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে এবং অনেক কিছু শিখেছি। আমরা এরই মধ্যে প্রচলিত সামনা-সামনি শিক্ষা থেকে মিশ্র, অনলাইন এবং ডিজিটাল শিক্ষায় চলে এসেছি। এমন বাস্তবতায় পেছনে না তাকিয়ে, আমাদের যা আছে তা পুঁজি করে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে।’