বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিজের গড়া দলকে এক করতে পারছেন না ড. কামাল

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ১২:৪৯

নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ড. কামাল হোসেন গণফোরাম গঠন করেন। তিনি গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগবিরোধী নির্বাচনি জোটের প্রধান নেতা হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, তবে নির্বাচনের পর তার দলেই ভাঙন ধরে। এ অবস্থায় অনুসারীদের মধ্যে যারা তাকে বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন, তাদের চিঠি দিয়ে এক হওয়ার অনুরোধ করেন ড. কামাল, কিন্তু কোনো অংশেরই ঐক্যে আগ্রহ নেই। দুই পক্ষই বলছে, অপর পক্ষ চাইলে আসতে পারে তাদের কাছে।

চোখের সামনে নিজের গড়া দল দুই ভাগ হয়ে গেল। কোন পক্ষে যাবেন কামাল হোসেন?

দুই পক্ষই বলছে, দলকে এক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা। এর অংশ হিসেবে তাকে বাদ দিয়ে ‘বিদ্রোহী অংশ’ মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে সভাপতি করতে যে সম্মেলন করা হয়, তাতে শুভেচ্ছাবার্তাও পাঠান ড. কামাল।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের এই সম্মেলনের দিন মন্টু ও তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত মোকাব্বির খানদের চিঠি দিয়ে বিভক্তির বদলে দলে ঐক্যে জোর দেন ড. কামাল, কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় সাড়া নেই কারও।

বিভক্ত দুটি অংশের নেতারা এখনও অনড়, তবে দুই পক্ষই বলছে অপর পক্ষ চাইলে তাদের কাছে আসতে পারে; কিন্তু নিজেরা যাবেন না তাদের কাছে।

নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ড. কামাল হোসেন গণফোরাম গঠন করেন। তিনি গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগবিরোধী নির্বাচনি জোটের প্রধান নেতা হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, তবে নির্বাচনের পর তার দলেই ভাঙন ধরে।

বারবার জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা নিজ দলের বিভক্তি ঠেকাতে ব্যর্থ হন। ৩ ডিসেম্বর দলটির মন্টুপন্থিরা রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলন করে কামাল হোসেনকে বাদ দিয়ে কমিটি করে।

এর সভাপতি করা হয় মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে, সাধারণ সম্পাদক করা হয় সুব্রত চৌধুরীকে; যিনি কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটির নির্বাহী সভাপতি ছিলেন।

দল ভেঙে যাচ্ছে যখন, সে সময় মরিয়া হয়ে এক রাখার চেষ্টা করেন কামাল হোসেন। মন্টু ও মোকাব্বিরের উদ্দেশে চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘আমি আশা করি গণফোরাম যে নীতি ও আদর্শ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, আপনারা গণফোরামের সব নেতা সম্মিলিতভাবে হাতে হাত রেখে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করবেন। আপনাদের বর্তমান সম্মেলনের পরে আপনারা নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে একসঙ্গে বসে ঐকমত্যে পৌঁছাবেন এবং গণফোরামকে দেশের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য আত্মনিয়োগ করবেন বলে আমি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’

চিঠি পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্টু অংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো আগেও চেষ্টা করেছি। আড়াই বছর তো অপেক্ষা করলাম, আর কত? তবে দেখা যাক কী হয়।’

মন্টুকে সভাপতি ঘোষণা করা কমিটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য মহসিন রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওনারা চাইলে আমাদের জন্য দরজা খোলা আছে। আমরা ওনাদের সসম্মানে আমাদের সঙ্গে নেব এবং ভালো জায়গায় রাখব।’

কামাল হোসেনকে সভাপতি মেনে চলা অংশের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খান। ছবি: নিউজবাংলা

অন্যদিকে কামাল হোসেনকে সভাপতি মেনে চলা অংশের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খা নও নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের স্যার চিঠি দিয়েছেন, তবে ওনারা (মন্টুপন্থি) গণফোরামের নীতি-আদর্শকে ধারণ করে ঐক্য চান, তাহলে এখনও স্বাগত। যারা ড. কামাল হোসেনের আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করতে চান, তাদের কথা বলছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী ২৯ তারিখ সম্মেলন করব। কেউ চাইলে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।’

‘তাহলে কি গণফোরাম দুই টুকরাই হয়ে থাকবে?’ এমন প্রশ্নে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমরা ড. কামাল হোসেনের আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করব। ওনারা চাইলে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘একটা নিবন্ধিত দলের নেতারা কেন ওনাদের সঙ্গে যাবেন। যাওয়ার প্রয়োজনও নেই। আমরা ওনাদের সঙ্গে যাব না। উল্টো ওনাদের কেউ ড. কামাল হোসেনের আদর্শ নিয়ে যদি আমাদের কাছে আসেন, তাহলে আমরা স্বাগত জানাব।’

গণফোরামে বিভক্তির শুরু হয় আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়াকে ঘিরে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি গণফোরামে যোগ দেন। এরপর প্রতিষ্ঠার সময় থেকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসা মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করেন ড. কামাল।

কিন্তু রেজার নেতৃত্ব মানতে রাজি ছিলেন না মন্টুরা। এ নিয়ে বিভেদের মধ্যে মন্টুর নেতৃত্বে দলের কয়েকজন নেতা ২৬ ডিসেম্বর আলাদা কাউন্সিলের ঘোষণা দেন।

ড. কামাল একপর্যায়ে মন্টু ও তার অনুসারীদের দল থেকে বহিষ্কার করলেও পরে সেই আদেশ ফিরিয়ে নেন।

এর মধ্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করেন রেজা কিবরিয়া, কিন্তু তাতেও বিভেদ মেটেনি। তখন রেজার বদলে মোকাব্বির খানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় মন্টুদের।

এর মধ্যে মতিঝিলের ইডেন বিল্ডিংয়ের ড. কামালের কার্যালয় দখল করে নিয়েছেন মন্টুরা। এই অবস্থায় কামাল অনুসারীরা নতুন কার্যালয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

শুরুতে পুরানা পল্টনের একটি ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় করে কাজ চালান মোকাব্বিররা। কিন্তু সেখানে নানা সমস্যার কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকরাইলের রূপায়ন টাওয়ারে দলের নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়।

এই অনুষ্ঠানে ড. কামাল উপস্থিত থাকবেন বলে মোকাব্বিরদের অংশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত সেখানে যাননি।

এ বিভাগের আরো খবর