বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাঁকখালীর মোহনায় দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় রানওয়ে

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ১২:৪৬

বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কয়েকটি ধাপে কাজ চলছে। এরই মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে ৬ শতাংশের মতো। বাঁধ সুরক্ষার জন্য ব্লক ফেলার কাজও চলছে জোরেশোরে। পুরো কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে।

আকাশপথে সমুদ্রকন্যা কক্সবাজারে যাতায়াত আরও আকর্ষণীয় করতে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে সেখানকার বিমানবন্দর। বড় করা হচ্ছে রানওয়ে। কাজ শেষ হলে ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ রানওয়ে হবে দেশের সবচেয়ে বড়।

রানওয়েটির ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে বাঁকখালী নদী ও বঙ্গপোসাগরের মোহনায়। মূলত নদীর বুক ছুঁয়েই বিমান ওঠানামা করবে এখানে।

বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণে এখন চলছে বালু ভরাটের কাজ। কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়ারছড়া এলাকায় নদীর পাড় ঘেঁষে চলছে এ কর্মযজ্ঞ।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে যাচ্ছে কক্সবাজার। এটি হলে বিদেশি ফ্লাইটগুলো সরাসরি নামতে পারবে এখানে। এতে কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনা অনেক গুণ বাড়বে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কয়েকটি ধাপে কাজ চলছে। এরই মধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে ৬ শতাংশের মতো। বাঁধ সুরক্ষার জন্য ব্লক ফেলার কাজও চলছে জোরেশোরে। পুরো কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে।

বিমান ওঠানামা নির্ভুল ও নিরাপদ করতে প্রকল্পটির আওতায় পানির মধ্যে ৯০০ মিটার পর্যন্ত প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ লাইটিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম, নিরাপত্তা প্রাচীরের পাশাপাশি বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ হচ্ছে সংযোগ সেতু।

পুরো কাজটি শেষ করতে খরচ হবে পৌনে চার হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে শুধু রানওয়ে নির্মাণে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরে কর্মীদের ব্যস্ততা। ছবি: নিউজবাংলা

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকাশপথে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের প্রধান রুট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হওয়ায় প্রতিনিয়ত সেখানে চাপ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের যেভাবে সম্প্রসারণ হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে এ চাপ আরও বাড়বে।

তা ছাড়া কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ঘিরে আধুনিক সুবিধা সংবলিত যেসব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে, তাতে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনাও। ফলে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মাণ সময়ের দাবি। এতে এভিয়েশন খাত যেমন লাভবান হবে, তেমনি বিকাশ হবে পর্যটন শিল্পেরও।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের বর্তমান অবস্থা কী

কক্সবাজার বিমানবন্দরের এখনকার টার্মিনালটি অনেক ছোট। তাই খুব বেশি যাত্রীকে সেবা দেয়ার সক্ষমতা নেই। রানওয়েটিও বড় ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা করানোর উপযোগী নয়। শুধু তা-ই নয়, একটি বিমানবন্দরে আধুনিক যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তার কিছুই নেই এখানে।

রানওয়ে সম্প্রসারণের কারণ

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েটির সম্প্রসারণ হলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বোয়িং ৭৭৭ ও বোয়িং ৭৪৭-এর মডেলের যাত্রীবোঝাই বিমানও সেখানে ওঠানামা করতে পারবে। এমনকি নিতে পারবে জ্বালানিও। আর এ সুবিধার কারণে দেশি-বিদেশি সরাসরি ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়বে। এতে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়ও।

কাজের অগ্রগতি

বর্তমানে বিমানবন্দরে ঢোকার রাস্তাসংলগ্ন একটি আপৎকালীন টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। আর নীল জলরাশি ছুঁয়ে নতুন রানওয়ে তৈরিতে বাঁকখালী নদীর বুকে ফেলা হচ্ছে বালু। এ জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আনা হয়েছে ড্রেজার ও বাল্কহেড। নদীর তীরবর্তী এলাকায় বালু ফেলছে এসব ড্রেজার। মাসখানেক আগে শুরু হয়েছে এ কাজ।

নদীর বুক চিড়ে এ রানওয়ে দৃশ্যমান করতে ফেলতে হবে অন্তত সাড়ে ছয় কোটি ঘনফুট বালু। কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে কাজ। যাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই যুক্ত হবে বাকিরাও।

সাব-কনট্রাক্টে কাজ করছে যারা

যেসব প্রতিষ্ঠান বালু ভরাটের কাজ পেয়েছে, তাদের একটি এডিসি কনস্ট্রাকশন। সাব-কনট্রাক্টে কাজ করা এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‌‌‘দৃষ্টিনন্দন রানওয়েটির নির্মাণের মূল কাজ পেয়েছে একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের সঙ্গে সাব-কনট্রাক্টে বালু ভরাটের কাজ করছি। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এভাবে কাজ করছে।’

মাকসুদুর বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান দুই কোটি ঘনফুট বালু ফেলবে। আশা করছি তিন-চার মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারব।’

অপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মোহাম্মদ মফিজুর রহমান জানান, সেখানে তার দুটি লোড ও দুটি আনলোড ড্রেজার কাজ করছে। কাজের গতি বাড়াতে যুক্ত করেছেন ছয়টি বাল্কহেড।

শুধু বালু ভরাটেই আটকে নেই রানওয়ের কাজ। বিমানবন্দরের সীমানার শেষ অংশে ফেলা হয়েছে বড় বড় ব্লক। আরেক পাশে দেয়া হয়েছে জিও ব্যাগ।

প্রধানমন্ত্রীর তাগিদেই হচ্ছে কাজ

বিশ্বমানের এ বিমানবন্দর নির্মাণে প্রথম তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাতে বিশ্বের দরবারে কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাকে তুলে ধরা যায়।

অবশ্য তার আগেই অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলে সুবিধা বাড়াতে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুট করা হয়। আর প্রস্থ ১২০ ফুট থেকে বাড়িয়ে করা হয় ২০০ ফুট।

২০১৭ সালে সম্প্রসারিত এই রানওয়েতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময়ই রানওয়েটি বিশ্বমানে উন্নীত করার নির্দেশ দেন তিনি। তারই অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প নেয় সরকার।

প্রকল্পের যত ব্যয়

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য বর্তমানের চেয়ে ১ হাজার ৭০০ ফুটের মতো বাড়ছে।

মূল কাজ করছে কারা

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণে কাজ দেয়া হয়েছে চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটারওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো-চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন নামে চীনা প্রতিষ্ঠানকে। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। গত আগস্টে প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রকল্প পরিচালক মো. ইউনুস ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমানবন্দরের বর্তমান টার্মিনালের অপর পাশে একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ আইকনিক টার্মিনাল তৈরি করা হবে। সেটি করতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে। সে জন্য আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একটি অস্থায়ী টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে। এটি হয়ে গেলে বর্তমান টার্মিনালটি ভেঙে ফেলা হবে।

‘আশা করছি ২০২২ সালের জুন মাসে আপৎকালীন টার্মিনাল ব্যবহার উপযোগী করা যাবে।’

ইউনুস ভূঁইয়া আরও বলেন, ‌‘২০২৪ সালের মে মাসে রানওয়ের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আমরা চেষ্টা করব ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যেই তা করতে।’

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কক্সবাজার একটা পর্যটন এলাকা। এখানে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হলে অবশ্যই সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আরও সহজ হবে। এই বিমানবন্দরকে কাজে লাগিয়ে কক্সবাজারকে একটা অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করা যাবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বহু গুণে বাড়বে।’

এ বিভাগের আরো খবর