বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল চক্র

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৯:৩৭

টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাকে কোনোভাবে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে এরপর সেখানে অশ্লীল ছবি তুলে জিম্মি করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে টাকা।

রাজশাহী শহরে এখন বেশ কয়েকটি চক্র ফাঁদ পেতে লোকজনকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে। এসব চক্রের নারী সদস্যরা কখনও প্রেমের ফাঁদে ফেলে টার্গেট করা ব্যক্তিকে বাসায় ডেকে আনছেন, কখনও আবার বিপদে পড়ার ভান করে সহযোগিতা চেয়ে মানুষকে জিম্মি করছেন।

টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাকে কোনোভাবে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে এরপর সেখানে অশ্লীল ছবি তুলে জিম্মি করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হচ্ছে টাকা।

জিম্মি হওয়ার পরও অনেকেই সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে কাউকে কিছু বলছেন না।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, এসব চক্রের বিরুদ্ধে তারা বিশেষ অভিযান চালাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি চক্রকে তারা এরই মধ্যে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে শহরে এমন চক্রের সংখ্যা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের তথ্য মতে, প্রতারণার অভিযোগে রাজশাহীতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আটক করা হয় ২১ জনকে। প্রতিটি দলে ছিলেন অন্তত একজন নারী। অনেক দলে দুইজন নারীও পাওয়া গেছে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এমন চক্রের প্রথম সন্ধান পায় পুলিশ। এখন পর্যন্ত এমন মামলা হয়েছে সাতটি। এসব মামলায় ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য মতে, শহরে এই চক্রের সংখ্যা বাড়ছে। একেকটি চক্র খুব বড় নয়। একটি দলে চার থেকে সর্বোচ্চ ছয়জন থাকে। বছরের পর বছর চক্রগুলো এগুলো করে আসছে। অনেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আবার এগুলো করছে।

প্রতারক চক্রগুলো সহজ সরল লোককে টার্গেট করে। বিশেষ করে জনবহুল এলাকাকে বেছে নেয় চক্রটি। নগরীর লক্ষ্মীপুরে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে রোগী ও তাদের স্বজনরা আসেন। এখানে গ্রাম থেকে আসা লোকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখানো হয়।

সম্প্রতি ধরা পড়া একটি চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই চক্রগুলোর সঙ্গে জড়িতরা কম কষ্টে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যম হিসেবে এই পথ বেছে নিচ্ছে। এদের সঙ্গে থাকা নারীদের কাউকে জোর করে এ পথে আনা হয়নি। বরং তারা নিজেরাই এই পথে যুক্ত হচ্ছে বাড়তি আয়ের আশায়। এক চক্রের সঙ্গে অন্য চক্রের যোগাযোগও সেভাবে নেই।

একেকটি চক্র নিজেরা নিজেদের মতো করে প্রতারণা করে। তারা একজনকে জিম্মি করতে পারলে তার কাছ থেকে বারবার টাকা আদায় করে। একই ছবি প্রচারের ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন টাকা আদায় করা হয়। যখন-তখন ফোন দিয়ে টাকা চায়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা। পশ্চিম রেলের একজন কর্মকর্তাকে (৪২) পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে একটি চক্র বাসায় দাওয়াত দেয়। চক্রের সদস্য সাবিনা ওরফে রজনী (২৫) মোবাইল ফোনে ওই কর্মকর্তাকে বাসায় ডেকে নেন। সেখানে যাওয়ার পরই চক্রের বাকি সদস্যরা তাকে জিম্মি করে ফেলেন। একজন নারীর সঙ্গে বসিয়ে বিবস্ত্র করে তার ছবি তোলা হয়। এরপর তার কাছে তারা ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। বিকাশের মাধ্যমে তারা শুরুতে ৬ হাজার টাকা গ্রহণ করে এবং একটি ফাঁকা স্ট্যাম্প কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এ ঘটনায় ওই সময় মামলা করেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা। এর পরই পুলিশ সাবিনাসহ তিনজনকে আটক করে।

রাজশাহীর বেসরকারি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার জন্য এসে বসে ছিলেন মানিক নামে এক যুবক। কিছুক্ষণ পর তার পাশে এসে বসেন এক নারী। তিনি মানিককে ‘ছোট ভাই’ সম্বোধন করেন। সেখানেই তাদের পরিচয় হয়। এরপর তিনি সুকৌশলে যুবককে বাসায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে চক্রের সদস্যরা তাকে ঘরে আটকে মারধর করে অশালীন ছবি ও ভিডিও করে। তারা ২ লাখ টাকা দাবি করে। মানিক বিকাশের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকা দেন। পরে চক্রটি তাকে একটি অন্ধকার গলিতে নিয়ে ছেড়ে দেয়।

এ ঘটনায় মানিক রাজপাড়া থানায় মামলা করলে চক্রের চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক চারজনের মধ্যে দুজন নারী ও দুজন পুরুষ।

এই চক্রটি পুলিশের কাছে স্বীকার করে, দীর্ঘদিন ধরে তারা লক্ষ্মীপুরে চিকিৎসার জন্য আসা ব্যক্তিদের নানা প্রলোভনে বাসায় নিয়ে নারীদের সঙ্গে অশ্লীল ছবি তুলত। পরে ব্ল্যাকমেইল করত।

সব শেষ ১ নভেম্বর এমনই একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরা হলো রাজশাহী মহানগরীর কাটাখালী থানার সমসাধীপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের সায়েম উদ্দিন শ্যাম (৩৫), বোয়ালিয়া মডেল থানার হাদির মোড় নদীর ধার এলাকার পারভেজ (৩২), এয়ারপোর্ট থানার বায়া তেরিপাড়া গ্রামের রাজিয়া সুলতানা সুমা (৩০) ও রাজপাড়া থানার বহরমপুর এলাকার শরিফা আক্তার সাথী (২৭)।

আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স করপোরাল গত ৩১ অক্টোবর নাটোর থেকে শিরোইল বাস টার্মিনালে নেমে বাড়ি যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠেন। এ সময় আরও দুই নারী যাত্রী একই অটোরিকশায় ওঠেন। কিছুক্ষণ পর নারী যাত্রীরা তার হাতে ঠিকানা লেখা একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলেন, তারা রাজশাহীতে নতুন এসেছেন, কিছু চেনেন না। তাদেরকে ওই চিরকুটের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন তারা।

ওই ব্যক্তি সরল বিশ্বাসে আসামিদের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার জন্য অটোরিকশা নিয়ে ঐতিহ্য চত্বরে এলে আরও দুই আসামি অটোরিকশায় ওঠেন। এরপর তারা সকলে অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে একজনের বাড়িতে নিয়ে চক্রের এক নারী সদস্যের সঙ্গে জোর করে অশ্লীল ছবি তোলেন।

অপহরণকারীরা তার কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ ও চাঁদা দাবি করেন। টাকা না পেলে অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। সম্মানের ভয়ে ওই ব্যক্তি ব্যাগে থাকা স্ত্রীর চিকিৎসার ৫০ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেন।

ওই ভুক্তভোগী বিষয়টি জানিয়ে ডিবি পুলিশকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগরীর রাজপাড়া থানার বহরমপুর এলাকা থেকে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এসব চক্র ফাঁদ পেতে অপহরণ ও চাঁদাবাজি করে আসছে। তিনি এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু চক্র আটক হয়েছে। তবে, যখনই কোনো চক্র ধরা পড়ছে, দেখা যাচ্ছে তারা নতুন। আগে ধরা পড়েনি। এ কারণে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না এমন চক্রের সংখ্যা কত। যারা ধরা পড়ছে, তাদের ব্যাপারে নজরদারি করা হচ্ছে। এদের একটা ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট এ বিষয়ে কাজ করছে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থা এসেছে যে, তারা অভিযোগ দিলে পুলিশ কাজ করছে। এ কারণে এখন অনেকেই এসব ঘটনা পুলিশকে বলছে। আগে যেটা হতো না।

এ বিভাগের আরো খবর