বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রধানমন্ত্রীর হস্ত‌ক্ষেপ চান আছপিয়া, ডিআইজিও চান চাকরিটা হোক

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০১:০১

আছপিয়ার মা ঝরনা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছি। তার চাকরি হয়েছে। কিন্তু আমার জায়গা-জমি না থাকায় চাকরি নাকি হবে না। এখন প্রধানমন্ত্রীর সুনজর চাই। যে করেই হোক আমার মেয়েকে চাকরিটি দিন। আমি তো আপনার দেশের নাগরিক।’

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য ভুল দেয়ায় আটকে যাওয়া পুলিশের চাকরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আছপিয়া ইসলাম কাজল। একই সঙ্গে ‘সরল ভুল’ উতরে উঠে তিনি চাকরিটি পাবেন বলে আশা জানিয়েছেন বরিশালের রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামানের।

তিনি বলেছেন, ‘মেয়েটির প্রতি আমার কষ্টবোধ থেকেই যাচ্ছে। এর জন্য আমাকে মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে।’

ব‌রিশা‌লের হিজলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাকরি না হওয়ায় শোকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আছপিয়া ইসলাম কাজলের পরিবার।

আছপিয়ার মা ঝরনা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছি। তার চাকরি হয়েছে। কিন্তু আমার জায়গা-জমি না থাকায় চাকরি নাকি হবে না। এখন প্রধানমন্ত্রীর সুনজর চাই। যে করেই হোক আমার মেয়েকে চাকরিটি দিন। আমি তো আপনার (প্রধানমন্ত্রী) দেশের নাগরিক।’

এদিকে আছপিয়া ইসলাম কাজলের চাকরি থেকে বাদ পরার বিষয়ে যথাযথ কর্মকর্তা নন এমনটা জানিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেননি রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান।

তিনি জানান, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগকর্তা সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপাররা। এরপরও আছপিয়ার বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার সৃষ্টি করলে বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিআইজি নিজেও একটি স্ট্যাটাস দেন তার ফেসবুকে।

সেখানে তিনি লিখেন, ‘বিধি মোতাবেক পুলিশ কাজ করবে। আমি বিধি মানি, কিন্তু মেয়েটির প্রতি আমার কষ্টবোধ থেকেই যায়। যারা তাকে নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করছে, তাদের দোয়ায়, কাজে যদি মেয়েটি চাকরি পায় তাতে আমি অনেক খুশি হব। আর এর জন্য আমাকে যে মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে তা সাহসে পরিণত হবে। দোয়া করি, মেয়েটির ভাগ্যে সোনার হরিণটি (চাকরি) যেন ধরা দেয়।’

আছপিয়া ইসলাম কাজল বলেন, ‘নিজের যোগ্যতায় প্রতিটি পরীক্ষায় পাস করেছি। অথচ জমি না থাকার কারণে আমার চাকরি হবে না কেন? নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হবে। আমি তো যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে সকল পরীক্ষায় পাস করেছি। তাহলে কেন আমার চাকরি হবে না?’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যোগ্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছেন। সেখানে যোগ্য লোকের চাকরি জমি না থাকার কারণে হবে না এটি সঠিক বলে মনে করি না। আমার চাকরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

আছপিয়া ইসলাম কাজলের জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে জানা গেছে, তিনি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামের মাতব্বর বাড়ির বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আছপিয়ার পরিবার সপরিবারে মাতব্বর বাড়ির মেজবাহউদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়িতে থাকেন। তার পিতা প্রয়াত শফিকুল ইসলাম ভোলার চরফ্যাসনের নিজের বাড়ি থেকে প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে হিজলা উপজেলায় এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি ব্যবসা করতেন।

বড় জালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ঝন্টু বেপারী বলেন, ‘আছপিয়াকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। ওর বাবা সৎ মানুষ ছিলেন। কিন্তু ৫-৭ বছর আগে রাতে স্ট্রোক করে মারা যান। এরপরই ওই পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। আছপিয়ার এক চাচা ইঞ্জিনিয়ার। সম্ভবত দাদা বাড়ির সঙ্গে ভালো সর্ম্পক নেই। তবে দাদা বাড়িতে ওরা বেশ জায়গা-জমি পাবে বলে জানিয়েছিলেন তার পিতা শফিকুল।’

এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘শফিকুল আমার সঙ্গে আলাপ করে হিজলায় জমি কিনে ঘর তুলবে বলে সব ঠিক করেছিল। এমনকি জমিও পছন্দ করেছি। হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় সব তছনছ হয়ে গেছে।’

ঝন্টু বেপারী বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও তাকে চাকরিটি দেয়া উচিত। ওরা তো এই দেশের নাগরিক।’

পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে বরিশাল জেলায় ১০ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে টিআরসি পদে সাতজন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেয়ার কথা বলা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আছপিয়া ইসলাম।

১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন আছপিয়া।

২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইনসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন তিনি।

২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইনসে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানেও কৃতকার্য হন আছপিয়া।

তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এই নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।

বুধবার হিজলা থানার এসআই মো. আব্বাস ভেরিফিকেশনে আছপিয়া বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন।

এ বিভাগের আরো খবর