দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলেও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদের সংসদ সদস্য পদ যাচ্ছে না। কারণ, যত দিনের সাজা হলে পদ হুমকিতে পড়ত, তত দিন সাজা হয়নি তার।
শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে তা বিক্রি করে আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের করা মামলায় ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর হারুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত।
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্টও তাকে দণ্ডিত ঘোষণা করে। কিন্তু সাজা কমিয়ে ১৬ মাস করে। আর এই ১৬ মাস এরই মধ্যে তিনি বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন। ফলে তাকে আর কারাগারে যেতে হবে না। আবার এই মামলায় বিচারিক আদালত যে অর্থদণ্ড ঘোষণা করেছিল, সেটিও বাতিল করা হয়েছে।
অর্থাৎ হারুনের এমপি পদ ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে এই সাজা কমানোর কারণে।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২ দফার ঘ উপদফা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর সাজা হলে মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারবেন না বা সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।
কিন্তু হাইকোর্ট এই পরিমাণ সাজা ঘোষণা করেনি হারুনের।
হারুনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন রায়ের পর বলেছেন, ‘যেহেতু ১৬ মাস সাজা বহাল রয়েছে, তাই তার সংসদ সদস্য থাকতে, নির্বাচন করতে আইনগত কোনো বাধা নেই। কারণ কমপক্ষে দুই বছর সাজা হতে হবে।’
বিএনপি নেতার আইনজীবীর সঙ্গে একমত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদও। তিনি হাইকোর্টের রায় শুনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকবে।’
হারুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি ওই আসন থেকে জিতে আসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে।
তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, ‘এমপি হারুনের সংসদ সদস্য পদ থাকার কথা না।’
দুই বছরের সাজা না হওয়ায় কেন থাকবে না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে একটি সাংবিধানিক প্রশ্ন চলে আসে। আজকে হাইকোর্ট যে রায় দিল, সেখানে বিচারিক আদালতের রায়টা বহাল হয়ে গেল। তার মানে তার সাজা বহাল। কিন্তু উনি যে সময়টা কাস্টডিতে ছিলেন, সেটা সার্ভ আউট হলো। তার মানে হলো, আপিলের রায় শুনে আমি মনে করি ওনার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।’
অন্যদিকে আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘বিচারিক আদালত তাকে পাঁচ বছর সাজা দিয়েছিল। হাইকোর্ট সাজা কমিয়ে (সার্ব আউট) তিনি যে ১৬ মাস জেলে ছিলেন, সেইটুকু বহাল রেখেছে। কাজেই সংবিধানের সেই ধারা এখানে প্রযোজ্য হয় না।
‘যেহেতু আদালত ১৬ মাস সাজা খাটা বহাল রেখেছে, সেহেতু তার সংসদ সদস্য পদে থাকতে আইনগত কোনো বাধা নেই।’
তবে এই রায়ে নাখোশ খোকন। বলেন, ‘আমরা বিক্ষুব্ধ। উনি (হারুন) নির্দোষ। উনি গাড়ি বিক্রি করেননি। কোনো অপরাধ করেননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করবেন।’
হারুনের বিরুদ্ধে মামলায় বলা হয়েছে, সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় শুল্কমুক্ত গাড়ি এনে তা বিক্রি করে দেন বিএনপি নেতা। তাকেসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা হয় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ।
অন্য দুই আসামি হলেন চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতুর রহমান বাপ্পী ও বর্তমানে খেলার চ্যানেল টি স্পোর্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক সাদেক। হারুনের যে সাজা, সেটি তাদের ওপরও প্রযোজ্য হবে।
মামলাটি তদন্ত করে তিনজনের বিরুদ্ধেই ওই বছরের ১৮ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোনায়েম হোসেন। আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিলে ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিচার শুরু হয়।