চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নে এক পরিবারের দুই নারীকে ধর্ষণ ও ডাকাতির মামলায় পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রায়ে খালাস দেয়া হয়েছে এক আসামিকে।
চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঈন উদ্দীন বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রায় দেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মিজান মাতব্বর প্রকাশ শহিদুল ইসলাম, আবু সামা, মহিদুল ইসলাম মুন্সি প্রকাশ রুবেল, জহিরুল ইসলাম প্রকাশ জহিরুল হাওলাদার, ইলিয়াছ শেখ প্রকাশ সুমন। তাদের মধ্যে ইলিয়াছ শেখ পলাতক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, কর্ণফুলীতে একই পরিবারের দুই নারীকে ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে দুবার করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া হান্নান নামে একজনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডাকাতির দায়ে প্রত্যেক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে ডাকাতি করতে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৩)/৩০ ধারায় ওই পাঁচজনকে যাবজ্জীবন করাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করে।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে কর্ণফুলীর বড় উঠান এলাকায় এক প্রবাসীর বাড়িতে হানা দেয় এক দল ডাকাত। এ সময় মালামাল লুটের পর দুই নারীকে ধর্ষণ করে তারা।
ঘটনার পরদিন ওই দুই নারী মামলা করতে গেলে ঠিকানা জটিলতার কথা বলে মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ। পরে তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পাঁচ দিন পর মামলা নেয় পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে।
কর্ণফুলী থানা পুলিশের এই বিতর্কিত ভূমিকার মধ্যেই পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর মামলার তদন্তভার যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে।
দায়িত্ব পাওয়ার দিনই মিজান মাতুব্বরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পিবিআই। এরপর ওই রাতেই আবু সামাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই দুজনের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতেই খুলে যায় মামলার জট। একে একে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার নাম-পরিচয় প্রকাশিত হয়। পরে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে আসে, পেশাদার মুঠোফোন চোর আবু সামার পরিকল্পনায় ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন তারা, জহিরুল বাইরে ছিলেন। মইদুলসহ বাকিরা ভেতরে গিয়েছিলেন।
মইদুল, ইলিয়াছ ও মিজান ধর্ষণে জড়িত ছিলেন। জহিরুল বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করেছেন। আর আবু সামা ও হান্নান ডাকাতিতে অংশ নিয়েছিলেন।
ঘটনার ২১ মাস পর ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ডাকাতির সময় দুজনকে ধর্ষণ ও দুজনকে ধর্ষণ চেষ্টা করেছিলেন আসামিরা। ওই মামলায় ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।