দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) আদলে দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বালক অনূর্ধ্ব-১৭ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বালিকা অনূর্ধ্ব-১৭ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের জাতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকার কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বিকেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলব। অর্থাৎ প্রতিটি বিভাগে একটি করে বিকেএসপি করব। ইতোমধ্যে দুটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাকিগুলোও করে দেব।’
সরকার তৃণমূল পর্যায়েও শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ নিশ্চিত করতে চায় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলার চর্চাটা যেন উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ভালোভাবে হয়। সে জন্য আমরা প্রতি উপজেলায় একটি মিনি স্টেডিয়াম অর্থাৎ উন্নতমানের খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। সেখানে ১২ মাস সবাই খেলাধুলা করতে পারবে, প্র্যাকটিস করতে পারবে। এটা খুবই প্রয়োজন।
‘ফুটবল, ক্রিকেট বা অন্য যেকোনো ধরনের স্পোর্টস হোক সেই জায়গাটি সুনির্দিষ্ট থাকবে। তা ছাড়া প্রতিটি এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত যাতে বাচ্চাদের খেলাধুলার সুযোগ থাকে সেই নির্দেশনা দিয়েছি।’
অসচ্ছল ও অসুস্থ ক্রীড়াবিদদের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো ক্রীড়াবিদ খেলতে গিয়ে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন, আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আবার একটু বয়স হয়ে গেলে আর খেলতে পারেন না। তখন তাদের খুব কষ্ট হয়। এই কষ্ট দূর করার জন্যই আমি অসচ্ছল ও অসুস্থ ক্রীড়াসেবীদের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশনকে আগে ১০ কোটি দিয়েছি। সামনে আরও ২০ কোটি টাকা দেয়া হবে। মোট ৩০ কোটি টাকা সিড মানি হিসেবে থাকবে, যেটা যেকোনো দুঃসময়ে কাজে লাগবে।’
আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারাই দেশকে এগিয়ে নেবে। দেশের সুনাম বয়ে আনবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের আমরা খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চায় সম্পৃক্ত রাখতে পারলে তারা বিপথে যাবে না। মাদকাসক্ত হওয়া, জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হওয়া বা লেখাপড়া ছেড়ে দেয়া- এসব করবে না। তারা সুস্থভাবে খেলাধুলা করবে, লেখাপড়াও করবে। মানুষের মতো মানুষ হবে, সেটাই আমি চাই।’
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো দিক থেকে পিছিয়ে থাকতে চাই না। পিছিয়ে থাকব না। বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে আমরা চলব।’
তরুণ সমাজকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘সে কারণেই খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চা, বিজ্ঞান শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, কম্পিউটার থেকে শুরু করে ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে শিক্ষা- সব ক্ষেত্রে যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা গড়ে ওঠে সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি।’
খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে সব ধরনের সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মেয়ে ও ছেলেদের আলাদা করে দেখি না। সবাইকে বলব, তোমরা খুব মনোযোগ দিয়ে খেলাধুলা করবে। মনে রাখতে হবে, ধীরে ধীরে তোমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে প্রতিযোগিতা করতে হবে। সে সময় তোমরা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। সেভাবেই তোমাদের আমরা তৈরি করতে চাই।’