সাতক্ষীরায় আশাশুনি থানার প্রতাপনগরের পল্লী বিদ্যুতের স্পর্শে অঙ্গ হারানো শিশু রাকিবুজ্জামানের চিকিৎসায় ২ কোটি ৬৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৮২ টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।
হাইকোর্টের নির্দেশে ২০৮৩ সাল পর্যন্ত শিশুটির সম্ভাব্য জীবনকাল ৭০ বছর ধরে হাত-পা সংযোজনসহ যাবতীয় খরচ বাবদ এমনটি ধরা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। পরে এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৫ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিচালক অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদের দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশু রাকিবুজ্জামানের চিকিৎসা পরিকল্পনা হলো কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন করা। ওই শিশুর বায়োনিক হ্যান্ড দুই দফায় জার্মানি বা ভিয়েতনাম থেকে আনতে হবে। ২০২১ সালে তার আট বছর বয়স ধরে ২০৮৩ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যয়ের সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট আনুমানিক সম্ভাব্য চিকিৎসা এবং তার খরচ ধরে তালিকাটি করেছে।
পল্লী বিদ্যুতের স্পর্শে শিশু রাকিবুজ্জামানের অঙ্গহানির ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করলে গত ৮ নভেম্বর আদালত শিশুর অঙ্গহানির ঘটনায় কী ধরনের চিকিৎসা হয়েছে এবং আরও কী চিকিৎসা প্রয়োজন, তাতে কত খরচ হবে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়।
রিটে বিদ্যুায়িত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়, চলতি বছর মার্চে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নকশা পরিবর্তন ও আব্দুর রাজ্জাকের দ্বিতল বাসবভনের ওপর দিয়ে ক্যাপ ও কভারবিহীন বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করে।
এই লাইনে সংযোগ না দিতে পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবর আবেদন করেছিলেন শিশুর বাবা আব্দুর রাজ্জাক। তার আবেদনেও কোনো সাড়া দেয়নি পল্লী বিদ্যুৎ। এরপর ৯ মে আব্দুর রাজ্জাক ঢালীর ৭ বছরের শিশু রাকিবুজ্জামান ওই বিদ্যুতের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয় এবং এতে তার শরীর ঝলসে হাড়-মাংস খসে পড়ে।
রাকিবুজ্জামানকে তাৎক্ষণিকভাবে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রেফার করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ মে রাকিবুজ্জামানের ডান হাতের বগল থেকে ও ডান পায়ের হাঁটু থেকে নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২৫ মে আব্দুর আব্দুর রাজ্জাক ঢালী সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ক্ষতিপূরণসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন করেন। তবে বিবাদীরা ক্ষতিপূরণ দেয়নি এবং অন্য কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।
পরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শিশুটির বাবা। আদালতে আবেদনকারী বাবার পক্ষে ছিলেন মুহম্মদ তারিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।