রাজশাহীতে ছাত্রলীগ নেতা শাহিন আলম হত্যা মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ২২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইলিয়াস উদ্দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রায় দেন।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুসাব্বিরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ও এইচ এম ইলিয়াস হোসাইন এই রায় দেন।
নিহত শাহেন শাহ রাজশাহী কোর্ট কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি নগরীর গুড়িপাড়া এলাকার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে।
তার বড় ভাই রজব আলী বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
শাহেন শাহ হত্যা মামলায় মোট ৩১ জন আসামি ছিলেন। সবার সাজা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজা পাওয়াদের জরিমানা করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা করে।
আলোচিত এ মামলার এক নম্বর আসামি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপিপন্থী সাবেক কাউন্সিলর মুনসুর রহমান। রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য আটজন হলেন হাসানুজ্জামান হিমেল, তৌফিকুল ইসলাম চাঁদ, মো. মহাসীন, মো. সাইরুল, মো. রজব, মো. বিপ্লব, মো. মমিন এবং আরিফুল ইসলাম।
সবার বাড়িই নগরীর গুড়িপাড়া ও আশপাশের এলাকায়। এরমধ্যে মমিন ও আরিফুল পলাতক।
যাবজ্জীবন সাজা পাওয়ারা হলেন- লাল মোহাম্মদ ওরফে লালু, মাহাবুল হোসেন, মো. সাত্তার, সাজ্জাদ হোসেন, বখতিয়ার আলম রানা, হাসান আলী, মাসুদ, রাসেল, রাজা, মো. মর্তুজা, মো. সুমন, মো. আসাদুল, মো. আখতারুল, জইদুর রহমান, ফরমান আলী, জয়নাল আবেদিন, রাজু আহমেদ, আকবর আলী, সম্রাট হোসেন , টিয়া আলম, আজাদ হোসেন ও মো. মাসুম। তাদের মধ্যে আজাদ ও মাসুম পলাতক।
এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট গুড়িপাড়া সাকিনের ক্লাব মোড়ে শাহেন শাহকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আসামিরা। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই নাহিদ আক্তার নাহান বাদী হয়ে পরদিন নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়।
তদন্তের পর ৩১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মামলাটি বিচারের জন্য রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার বাদী শাহেন শাহর ভাই নাহিদ আক্তার নাহান বলেন, ‘আজ যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে আমরা তাতে সন্তুষ্ট। এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায় কার্যকর হোক এটাই আমাদের চাওয়া।’
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমার ভাই রজব আলী কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। এক নম্বর আসামি মুনসুর রহমানও কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনের আগে তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছিলেন। এই অভিযোগ আমার ভাই রজব আলী এবং শাহেন শাহ নির্বাচন অফিসে করেছিলেন।
‘এটা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছিলেন মুনসুর আলী ও তার লোকজন। নির্বাচনে মুনসুর আলী বিজয়ী হওয়ার কিছুদিন পর প্রকাশ্যে শাহেন শাহকে হত্যা করা হয়।’
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোসাব্বিরুল ইসলাম জানান, মামলায় আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য নেয়। গত বছরের ১১ নভেম্বর আদালতে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর আদালত ১০ ডিসেম্বর মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করেন।
তবে ওই দিন রায় ঘোষণা হয়নি। এভাবে ১৪ বার রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়েছে।
মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী হামিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, ‘তারা এই রায়ে সন্তুষ্ট নন। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।’