স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও চূড়ান্ত হয়নি মাদারীপুরে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা। এতে শূন্য পড়ে রয়েছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের নামের স্থান।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণেও তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, মাদারীপুর শহরের শকুনী লেকের পাড়ে প্রায় ১৫ বছর আগে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাম স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালে লেকের সৌন্দর্যবর্ধনের সময় সেটি ভেঙে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আঙিনার নতুন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
তবে তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় স্মৃতিস্তম্ভে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের শিলালিপি এখনও লাগানো হয়নি। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে নামহীন স্মৃতিস্তম্ভেই শ্রদ্ধা জানান সবাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদারীপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে ২০০২ সালের নভেম্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি নামফলক নির্মাণের জন্য ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। তবে জায়গা নির্ধারণ, নকশা অনুমোদন ও নামফলকের মুখ কোন দিকে থাকবে-এসব সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত না হওয়ায় দীর্ঘ দিন কাজ শুরু হয়নি।
আড়াই বছর পর ২০০৫ সালের এপ্রিলে মাদারীপুর লেকের উত্তর পাশে স্বাধীনতা অঙ্গনে চার ফুট বেদিতে ১৫ ফুটের স্মৃতি নামফলকের নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না পাওয়ার অজুহাতে ফলকে খচিত হয়নি কোনো নাম। ২০১৭ সালে নতুন স্মৃতিস্তম্ভের কোনো শিলালিপি লাগানো হয়নি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মুর্তজা হাওলাদার বলেন, ‘দেশের জন্য যারা জীবন দিলেন আজ পর্যন্ত তাদের নামটুকু পর্যন্ত টাঙানো হয়নি। কীভাবে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে শহীদের ইতিহাস জানবে?
‘আমি শিগগির শহীদদের নাম টাঙানোর অনুরোধ করছি। প্রশাসনের লোকজনও দিবস আসলে খবর নেয়, পরে আর তাদের এ বিষয় খোঁজও থাকে না।’
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মব্বত চৌকিদার জানান, ‘আগে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি লেক পাড়ে ছিল, এখন ডিসি অফিসের ভেতর করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্মৃতি নামফলকের তালিকার কাজ শেষ না হওয়ায় এটি এখন পরিত্যক্ত জায়গায় পরিণত হয়েছে।
‘আগে তো ছোট ছোট শিশুরা অন্তত খেলা করতে পারত, এখন তো কেউ তাকিয়েও দেখে না। কবে যে শহীদের নামের তালিকা করতে পারবে, সেটা আমরা দেখে যেতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’
মাদারীপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানভীর আকাশ বলেন, ‘আগে আমরা লেকপাড়ে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি দেখতে পেতাম। এখন তো তাও দেখতে পাই না।
‘ডিসি অফিসের ভেতরে যাওয়াটাও প্রশ্নবিদ্ধ। এ ছাড়া শহীদদের নামের তালিকাও টানানো হয়নি। ফলে আমরা নতুন প্রজন্ম শহীদদের নাম পরিচয়টুকুও জানতে পারছি না। এটা সরকারের নজরে আনা উচিত।’
স্মৃতি নামফলকের তৎকালীন ঠিকাদার অহিদুর রহমান তোতা ভুঁইয়া জানান, ২০ লাখ টাকায় শকুনী লেক পাড়ের স্মৃতিস্তম্ভের কাজ শেষ হওয়ার পর একটি তালিকা পেয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন কমান্ডার হারুণ অর রশিদের কাছ থেকে পাওয়া পাঁচজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম স্মৃতিফলকে লেখাও হয়।
তবে মাত্র পাঁচজন শহীদের নাম নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে নাম ফলক থেকে তা মুছে ফেলা হয়। পরে আর নামের তালিকা পাননি। এ জন্য ডিসি অফিসের ভেতরের স্মৃতিস্তম্ভেও কোনো নাম খোদাই করা হয়নি।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, কিছু জটিলতার কারণে জেলার শহীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়নি, সরকারি গেজেটও হয়নি। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশের কাজ চলছে। তার ধারণা, আগামী বছরের শহীদদের নামের গেজেট প্রকাশ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই তালিকা টাঙিয়ে দেয়া হবে।