বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুরাদকে সমালোচনার ভাষাতেও ‘অশালীনতার’ ছড়াছড়ি

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ২০:২৫

মুরাদ হাসানের আচরণের সমালোচনাকারীদের বেশির ভাগই ব্যবহার করেছেন অশ্লীল ও কুরুচিকর শব্দ-বাক্য। কেউ কেউ মুরাদের ‘জন্ম পরিচয়’ নিয়ে কথা বলেছেন। তার মাথায় চুল না থাকা নিয়ে করেছেন কটাক্ষ। তির্যক মন্তব্যের সঙ্গে অকথ্য গালিগালাজও করেছেন অনেকে।

নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বর্ণবাদী মন্তব্য এবং অশালীন ফোনালাপের জেরে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন ডা. মুরাদ হাসান। তার আচরণের তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ফেসবুকে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর বিভিন্ন পোস্টে কমেন্ট করেও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।

তবে সেসব কমেন্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, মুরাদের আচরণের সমালোচনাকারীদের বেশির ভাগই ব্যবহার করেছেন অশ্লীল ও কুরুচিকর শব্দ ও বাক্য।

কেউ কেউ মুরাদ হাসানের ‘জন্ম পরিচয়’ নিয়ে কথা বলেছেন। তার মাথায় চুল না থাকা নিয়ে করেছেন কটাক্ষ। তির্যক মন্তব্যের সঙ্গে অকথ্য গালাগালাজও করেছেন অনেকে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মঙ্গলবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে পদত্যাগপত্রটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান। রাতেই সেটি গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

মুরাদ হাসান মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে, নিজের ভুলের জন্য ‘মা-বোনদের কাছে’ ক্ষমা চান।

নিজের ভেরিফায়েড পেজে তিনি লিখেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নেব আজীবন।’

সেই স্ট্যাটাসে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রিঅ্যাক্ট করেছেন ১ লাখ ৭১ হাজার মানুষ। যাদের মধ্যে ‘হাহা’ রিঅ্যাক্ট করেছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার। স্ট্যাটাসে কমেন্ট পড়েছে ৬৬ হাজার।

নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্যের কারণে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে মুরাদকে। তবে তাকে সমালোচনা করতে গিয়েও নারীবাচক আপত্তিকর অসংখ্য শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করেছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। সম্পাদকীয় নীতির অংশ হিসেবে অশালীন এসব কমেন্টের নমুনা নিউজবাংলা প্রকাশ করছে না।

তবে কমেন্টকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই কোনো সাড়া দেননি। কয়েকজন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন। আর কারও দাবি, তাদের অবস্থান ‘সঠিক’।

অস্ট্রিক ঋষি নামের এক সংস্কৃতিকর্মীর কমেন্টে রয়েছে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। আপত্তিকর আচরণের সমালোচনা করতে গিয়ে পাল্টা অশালীন মন্তব্যের কারণ জানতে চাইলে অস্ট্রিক ঋষি দাবি করেন, খারাপ লোকের সঙ্গে আরও খারাপ আচরণ করাই যথার্থ।

তিনি বলেন, ‘যাই হোক আজাইরা প্যাঁচাল পাড়তে আর ভাল্লাগছে না। যা লেখার সেইটা মন দিয়া লেখেন। বেস্ট অব লাক।’

আলোচিত ইউটিউবার তাহসিন্যাশন তার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকেও করেছেন অশ্লীল কমেন্ট। তার এই কমেন্টে আবার হাহা রিঅ্যাক্ট করেছেন ১৪ হাজার মানুষ।

এ ধরনের হাজার হাজার কুরুচিপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক কমেন্টের মধ্য দিয়ে মুরাদ হাসানের অশ্লীল শব্দ প্রয়োগের জবাব দিচ্ছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

কোনো ব্যক্তির বিতর্কিত আচরণের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পাল্টা অশালীন শব্দ ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে সমালোচনাকারীদেরও একই মানসিকতার প্রকাশ ঘটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, ‘সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান যে ভাষায় কথা বলেছেন তা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ও অবমাননাকর। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার এমন মন্তব্যের নিন্দা জানাই। কিন্তু তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে তাও গ্রহণযোগ্য নয়।’

তিনি বলেন, “আমি যখন তাকে বলব- ‘টাকলা মুরাদ’ তখনই তাকে বডি শেমিং করা হবে। এটা আমি করতে পারি না।”

ড. আমানুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দেশে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম বলতে কিছু নেই। ডা. মুরাদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ অতি উৎসাহের কারণে তার (মুরাদ) যে ব্যক্তিগত কিছু অধিকার আছে তাও ভুলে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো আমাদের দেশে ডিজিটাল সিটিজেনশিপ সম্পর্কে জানার অভাব।’

মুরাদ হাসানের মন্তব্যের প্রতিবাদ অবশ্যই হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘কিন্তু প্রতিবাদ করতে গিয়ে যেন তাকে ব্যক্তিগতভাবে অশালীন আক্রমণ করা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, ‘এখন অনেকে যে ভাষায় পদত্যাগ করা প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের সমালোচনা করছেন, সেটাও এক ধরনের অপরাধ। কারণ, সমালোচনা করার একটা ভাষা আছে, ব্যাকরণ আছে, তারও একটি শিষ্টাচার আছে।’

আলোচনা-সমালোচনায় কোনো বাধা নেই বলে মনে করেন এই শিক্ষক। তবে সেটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে হওয়া উচিত বলে তার মত।

তিনি বলেন, ‘সমালোচনা করতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তার জন্য তার পদ ছাড়তে হয়েছে। এখন যারা একইভাবে সমালোচনা করছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনার সুযোগ আছে।’

এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সামগ্রিকভাবে দেশের মানুষের মধ্যে সামাজিক, আদর্শিক, নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মানুষের অবস্থান, অধিকার, আত্মমর্যাদা, কোন কথা বলা উচিত, কোন কথা বলা উচিত না, সেই বলার ভাষাটা কেমন হবে, ধরন কেমন হবে- এগুলোর ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, আমাদের এক ধরনের সামাজিক, আদর্শিক, নৈতিক শিক্ষা প্রয়োজন।

‘সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে আমরা দেখতে পাচ্ছি এই শিক্ষাটার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এই ঘাটতির কারণেই আমরা বুঝতে পারি না, আমরা কোন অবস্থানে আছি, সেখান থেকে কীভাবে কথা বলতে হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর