আওয়ামী লীগের কেউ অশোভন বক্তব্য দিলে তার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিলেও বিএনপির একই অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না, বরং পৃষ্ঠপোষকতা করে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
হাছান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেউ অশোভন বক্তব্য দিলে তার বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু বিএনপি তাদের নেতাদের অশোভন বক্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না, বরং পৃষ্ঠপোষকতা করে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ডা. মুরাদ হাসানের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য, কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে এবং যেহেতু সেগুলো সরকার এবং দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। তাকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় পদ থেকেও বহিষ্কার করেছে। তার কিছু বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন এবং বিএনপি মহাসচিবসহ তাদের নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রেখেছেন। সেই বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ কেউ অন্যায় করলে অবশ্যই প্রতিবাদ হয়।
‘কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপি নেতারা যখন এ ধরনের অশোভন কথা বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেন, তাদের বিরুদ্ধে তাদের দল কখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, বিবৃতিও দেয়নি। এমনকি নারী নেতৃবৃন্দ যারা মুরাদ হাসানের ক্ষেত্রে সোচ্চার হয়েছেন, তাদেরও বিএনপির অশোভন বক্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখিনি।’
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে অশোভন উক্তির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও এক চিত্রনায়িকাকে ফোন করে আপত্তিকর ভাষায় কথা বলার ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন মুরাদ আহমেদ। তাকে দল থেকেও বাদ দেয়া হচ্ছে।
মুরাদের নানা বক্তব্য নিয়ে যখন সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনা, সে সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের একটি ভিডিও ছড়িয়েছে। তিনি একই ধরনের ভাষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদিকে জড়িয়ে আক্রমণ করেছেন।
মুরাদ এবং আলাল- দুজনের বিরুদ্ধেই শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযোগটি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পাঠানো হবে। তারাই ব্যবস্থা নেবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে মুরাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। তবে আলালের বক্তব্য নিয়ে দলটি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বরং তার বিরুদ্ধে ডায়েরি করার ঘটনায় গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, তাদের যুগ্ম মহাসচিবের বক্তব্য ছিল ‘ন্যায়সঙ্গত সমালোচনা’।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা ইন্টারনেটে দেখেছেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ইশরাক হোসেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের অশোভন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, কাউকে বিবৃতি দিতে দেখিনি।’
‘সরকারি দলের কেউ বললে অবশ্যই প্রতিবাদ হবে, হওয়াটাই স্বাভাবিক’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার কিংবা দল যে কাউকে ছাড় দেয় না, সেই প্রমাণ সবাই পেয়েছে। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে সবাই কেন নিশ্চুপ ছিলেন, সেটিই আমার প্রশ্ন।’
তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের নেতারা এই অনাচারগুলো করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বিএনপির উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, ‘এম এ মালেক ইউকে থেকে যে ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন এরপর কি তার দলীয় পদ থাকা উচিত ছিল?
বিএনপির এই নেতার বক্তব্য এখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাকে তো দল থেকে বাদ দেয়া হয়নি। তার অর্থ যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে ও নোংরা কথাবার্তা বলে, বিএনপি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। তাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে বলব, আয়নায় নিজের দিকে তাকানোর জন্য, নিজের গায়ে দুর্গন্ধ মেখে অপরের দুর্গন্ধ খোঁজা উচিত না।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হেদায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান ও সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান বক্তব্য রাখেন।