বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘৫ কিমি সড়ক পেরোতেই লেগেছে আড়াই ঘণ্টার বেশি’

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:২৫

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিআরটির ধীরগতির নির্মাণকাজের কারণে গাজীপুরের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ভেঙে পড়েছে। তারা যদি আন্তরিক না হয় তাহলে এই সমস্যা সমাধানের অন্য কোনো পথ নেই।’

খানাখন্দে ভরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে বুধবারও। এতে মহাসড়কজুড়ে দ্বিতীয় দিনের মতো দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।

দুই দিন ধরে এই মহাসড়কের চালক-যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। গাজীপুর অংশের খানাখন্দ ও গর্তে পড়ে বিকল হয়েছে কিছু যানবাহনও।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী ও উত্তরা-এয়ারপোর্ট অংশে সকাল থেকেই তীব্র জট। গাড়ির গতি এতটাই ধীর যে দেখে মনে হবে স্থবির সব।

মঙ্গলবার সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি এই মহাসড়কে ছিল তীব্র যানজট।

বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার, ভোগরা বাইপাস থেকে তারগাছ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার অংশে যানবাহনের ধীরগতি দেখা গেছে।

শহিদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘সকাল ৭টায় গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। সাড়ে ৯টায় পৌঁছেছি কুনিয়া তারগাছ পর্যন্ত। মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়ক পেরোতেই সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টার বেশি।’

তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী জীবন চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঢাকা-এয়ারপোর্ট হয়ে যারা টঙ্গী-গাজীপুর আসবেন আজ দুপুরের খাবার, রাতের খাবার এবং কালকে সকালের নাস্তা সঙ্গে নিয়ে বের হবার অনুরোধ রইল’।

গাজীপুর থেকে উত্তরার দিকে আসা সায়মা সুলতানা বলেন, ‘সকাল ৯টায় বোর্ডবাজার থেকে রওনা হয়েছি উত্তরার উদ্দেশে, কিন্তু টঙ্গীতে যখন যানজটে আটকে ছিলাম তখন ১২টার বেশি বাজে। এভাবে প্রতিনিয়ত যানজটে আটকা পড়ে দুর্ভোগ হচ্ছে আমাদের।এই সমস্যা সমাধানের কি কেউ নেই?’

টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য জানান, বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এ কাজ করতে গিয়ে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ ও গর্ত। কোথাও কোথাও সড়ক কেটে রাখায় যান চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। এর মধ্যে টানা বৃষ্টিতে গর্তগুলোয় পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। তাই গাজীপুর অংশে তীব্র যানজট। এর প্রভাব রাজধানীতেও পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টঙ্গী ব্রিজ পার হয়ে সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে গেলেই চোখে পড়ে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ। সেখানে জমে আছে বৃষ্টির পানি। স্টেশন রোড ও চেরাগআলি এলাকার সড়কের অবস্থা আরও ভয়াবহ। কাদামাটিতে একাকার পুরো সড়কে ভর্তি খানাখন্দ। যানচালকরাও এই অংশে গাড়ি চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

মহাসড়কের গাজীপুরা অংশে ঢাকামুখী এক লেনে গাড়ি চলাচল করছে। এ কারণে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে আসা গাড়িগুলো ভোগরা বাইপাস পার হওয়ার পর থেকেই লম্বা যানজটে আটকা পড়ছে। এ ছাড়া ভোগরা বাইপাস থেকে মিরেরবাজার হয়ে কাঞ্চনব্রিজের যে সড়ক, সেটি প্রায় অকেজো। ওই সড়কে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানগুলো চলাচল করতে না পারায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, যানজট নিরসনে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বেহাল সড়ক ঠিক না হলে যানজট কমানো সম্ভব না। বিআরটি কর্তৃপক্ষকে সড়কের ভাঙা অংশ ও খানাখন্দ সংস্কারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারা সংস্কার কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘বিআরটির ধীরগতির নির্মাণকাজের কারণে গাজীপুরের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ভেঙে পড়েছে। তারা যদি আন্তরিক না হয় তাহলে এই সমস্যা সমাধানের অন্য কোনো পথ নেই।’

এ বিষয়ে বিআরটির পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পের আওতাধীন টঙ্গী অংশে বৃষ্টির কারণে খানাখন্দ হয়ে সমস্যা হচ্ছে। এই অংশটুকু বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ দেখাশোনা করে। সেখানে মেরামতকাজ চলছে। একটু ধৈর্য ধরুন, সমাধান হয়ে যাবে।

‘গাজীপুরা অংশে ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। সেখানে ফ্লাইওভারের পাশে কংক্রিট বেজমেন্টের কাজ চলছে। তাই একটি লেন সাময়িক বন্ধ রয়েছে।’

বিআরটির প্রকল্প পরিচালক (সেতু বিভাগ) মহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘টঙ্গী অংশের বিভিন্ন জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে সাময়িক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হচ্ছে। বৃষ্টি হলে খানাখন্দগুলো বড় হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। এ জন্য বৃষ্টির সময় মেরামত কাজ করা যায় না। বৃষ্টি কমলে সেগুলো মেরামত করতে হয়। আজ (বুধবার) দ্রুত মেরামত কাজ করা গেলে কাল থেকে আর দুর্ভোগ থাকবে না।’

ট্রাফিক বিভাগের বিআরটির প্রতি তোলা অভিযোগ স্বীকার করে মহিরুল বলেন, ‘তারা ঠিকই বলেছে। গত দুই-তিন দিনের বৃষ্টিতে সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে গেছে। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের কারণে বিভিন্ন অংশে সড়ক সরু হয়ে গেছে।

‘আগে গাড়িগুলো যেভাবে এদিক-সেদিক দিয়ে চলে যেতে পারত, সেটি এখন পারছে না। সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় গাড়িগুলোকে একটা শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। পাশাপাশি এই মহাসড়কে গাড়ির চাপ তো আছেই। ট্রাফিক পুলিশের বাইরেও ঠিকাদারের পক্ষ থেকে ৪০ জন লোক রয়েছে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জন্য।’

সংস্কারকাজে ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারও ততটা ভালো পাইনি। যার কারণে যতটা মিনিমাইজ করা যেত সেটা করা যাচ্ছে না। চায়নিজ ঠিকাদার হওয়ায় তারা ভাষা বোঝে না। আমাদের জনদুর্ভোগটা আমি-আপনি যেমন অনুভব করি, তারা সেটা করে না। চায়নারা অন্য দেশ থেকে এসেছে, তারা তাদের স্বার্থটা আগে দেখে। এ জন্য আমাদের দুর্ভোগ হচ্ছে।’

প্রকল্প পরিচালক জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে সড়কের নিচের অংশের নির্মাণকাজ শেষ হলে দুর্ভোগ আগামী ১০ বছরের জন্য থাকবে না। এর পরেও যদি যানজট হয় তবে সেটা হবে অদক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে, অবকাঠামোর জন্য না।

পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আগামী ১০ বছরে কোনো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হবে না বলেও জানান বিআরটির এই কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর