বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চার জেলায় ৪১ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ১১:২৫

ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে নড়াইলে ১৮ হাজার ৬৩২ হেক্টর, মাদারীপুরে ১০ হাজার ৪২৬, মুন্সিগঞ্জে ১১ হাজার ও লক্ষ্মীপুরে ৫০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ বাংলাদেশে আঘাত হানলেও এ থেকে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের অধিকাংশ এলাকায় টানা বৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শীতকালীন বিভিন্ন শস্য ও সবজির ক্ষেত।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ধান, সরিষা, গম ও মসুরের ডালের ক্ষেতে। আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির ক্ষেতেও পানি জমে তা নষ্ট হওয়ার পথে।

শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে কী পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা প্রথমে জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ। এখন সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাচ্ছে তারা।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চার জেলার কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতির কথা উঠে এসেছে।

এর মধ্যে নড়াইলে ১৮ হাজার ৬৩২ হেক্টর, মাদারীপুরে ১০ হাজার ৪২৬, মুন্সিগঞ্জে ১১ হাজার ও লক্ষ্মীপুরে ৫০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

নিউজবাংলার জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নড়াইলে সরিষা, গম ও মসুরের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি

তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে নড়াইলে ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার ৬৩২ হেক্টরের বেশি জমির ফসল। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে গম, সরিষা, মসুর, বোরো ধানের বীজতলা, মরিচ, শাক, বেগুন, মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলসহ শীতের নানা সবজি।

পানি জমে যাওয়া নড়াইলের একটি মুলাক্ষেত

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার রায় জানান, টানা বৃষ্টিতে নড়াইলে ১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি, ১৬২ হেক্টর বোরো বীজতলা, ৫০ হেক্টর জমির মরিচ, ৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির সরিষা, ৭ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির মসুর ডাল এবং ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমির গম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সরিষা, গম ও মসুর ডালের ক্ষেত। প্রায় ৭০ ভাগ জমিতে এসব ফসল চাষাবাদ হয়েছে। এই বৃষ্টির কারণে এবার রবি আবাদ (শীতকালীন ফসল) বিলম্বিত হবে। এ মৌসুমে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও আছে সংশয়।

মাদারীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল

বৃষ্টি ও সেই পানি জমে মাদারীপুর জেলায় ১০ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমির রবি শস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে মাদারীপুর ভারি বর্ষণ হয়েছে। এতে অধিকাংশ কৃষকের আমন ধান বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে নষ্ট হচ্ছে।

এ বছর রবি মৌসুমে জেলায় ৪৫ হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলার কৃষি অফিসের মাঠকর্মীরা এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছেন।

সেই হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ২ হাজার ৯৫ হেক্টর সরিষা, ২ হাজার ১৫২ হেক্টর মসুর, ১ হাজার ৩০৫ হেক্টর খেসারি, মাষকলাই ৪৫ হেক্টর, ধনিয়া ৪২০ হেক্টর, পেঁয়াজ ১ হাজার ৭৫ হেক্টর, রসুন ১ হাজার ২০৫ হেক্টর ও ৪৩০ হেক্টর কালোজিরার ক্ষতি হয়েছে।

এ ছাড়া ৪০ হেক্টর আলু, ৫৩ হেক্টর ভুট্টা, ১৪ হেক্টর মিষ্টি আলু, ৬০২ হেক্টর গম, ৮০ হেক্টর মরিচ, শাক-সবজি ৬৯৮ হেক্টর, বোরো বীজতলা ১৬১ এবং ৬০ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সদর উপজেলার কুনিয়ার কৃষক জাহাঙ্গীর শরীফ বলেন, ‘দুই দিন আগে ১২ কাঠা জমির আমন ধান কেটে রেখেছি। বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়ে গেল। বৃষ্টি যদি আবারও আসে তাহলে ধানের অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাবে।’

রাস্তি এলাকার কৃষক বেলাল খান বলেন, ‘আমাদের এলাকার নিচু জায়গায় যেসব মসুর, খেসারি ও সরিষা চাষাবাদ করা হয়েছিল, তা এই ঘূর্ণিঝড়ে তলিয়ে গেছে। কোনো ফসলই আর জীবিত নেই। এই পানি না সরলে নতুন করে আর ফসলও চাষ করা যাবে না।’

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘জেলার কৃষকদের আমন ধান ঘরে তোলা শেষপর্যায়ে। তবে বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি, মসুর ও সরিষার ক্ষতি হয়েছে।’

মুন্সীগঞ্জে হাসি নেই আলু চাষির মুখে

আলুর জমিতে পানি জমায় মুখ থেকে হাসি উধাও হয়ে গেছে মুন্সিগঞ্জের চাষিদের।

গত বছরের লোকসান পুষিয়ে এবার ভালো লাভের আশা করেছিলেন জেলার আলু চাষিরা। তবে অসময়ের ভারি বৃষ্টিতে তাদের সেই স্বপ্ন ধুয়ে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার হেক্টর জমিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বীজ ও চারা বাঁচাতে এখন দ্রুত জমি থেকে পানি সরানোর পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি অধিদপ্তর।

মুন্সীগঞ্জের আলুর ক্ষেত

কৃষকরা জানান, গত বছর মণপ্রতি আলুতে তিন থেকে চার শ টাকা লোকসান গুনেছেন জেলার চাষিরা। সেই লোকসান পুষিয়ে লাভের আশায় এবার দুই সপ্তাহ আগ থেকে জেলায় আলু লাগানো শুরু করেছেন চাষিরা। কারও জমিতে চারা হয়েছে, কেউ বা মাত্র দুই-চার দিন আগে বীজ রোপণ করেছেন।

বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক জসিম প্রধান আলী বলেন, ‘পানির নিচে থাকলে আলুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। কিছুদিন আগেই লাগিয়েছিলাম।’

গজারিয়া সোলআনী গ্রামের ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রতিবছর অধিক লাভের আশায় এই এলাকার লোকজন আগাম জাতের আলু লাগায়। বুধবার সকালে ৪০ শতক জমিতে আলু লাগিয়েছি। টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমায় আজ বীজগুলো তুলতে না পারলে সব পচে যাবে।’

সিরাজদিখানের লতিফদি গ্রামের সালাউদ্দিন মিয়া জানান, ১৪ কানি জমিতে ৫৬ বস্তা আলুর বীজ রোপণ করেছেন। সার, শ্রমিক খরচ ও জমি চাষেই খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা।

মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশীদ আলম জানান, যাদের জমিতে আলুর গাছ হয়েছে, তাদের বিশেষ ক্ষতি হবে না। তবে যারা দু-এক দিনের মধ্যে বীজ লাগিয়েছেন, তাদের বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। ফের বীজ লাগাতে হবে।

আলুর ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা বের করতে পারলেও অন্য ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নির্দিষ্ট করতে পারেননি এ কৃষি কর্মকর্তা। পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও সাত দিন লাগবে বলে জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টি ও মেঘনার জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ হেক্টর জমির ফসল

লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও মেঘনার জোয়ারের পানিতে শীতকালীন ফসল ও পাকা আমন ধানসহ প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় এরই মধ্যে ৬০ ভাগ আমন ধান কাটা হয়েছে। বাকি ধান কয়েক দিনের মধ্যেই কাটা শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে অসময়ের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাঠে থাকা ধানের।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর জেলায় প্রায় ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন ফসল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ প্রায় ৫০০ হেক্টর। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব পেতে কয়েক দিন লাগবে।

সদর উপজেলার কুশাখালীর কৃষক মানিক মিয়া ও তোরাবগঞ্জ এলাকার জসিম উদ্দিন জানান, কয়েক দিন পর পাকা ধান ঘরে তোলার কথা তাদের। তবে বৃষ্টির পানি জমে সব ধান ডুবে গেছে।

তাদের অভিযোগ, খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ক্ষেতের পানিও সরছে না। এতে প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকির হোসেন জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে শীতকালীন ফসলের ভালোই ক্ষতি হয়েছে। আরও বৃষ্টি হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।

ঝালকাঠিতে আমন ওঠেনি অধিকাংশ চাষির ঘরে

জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমন চাষিরা। অধিকাংশ কৃষকের ধান এখনও কাটা হয়নি। এ ছাড়া খেসারি ডাল ও শীতকালীন সবজির ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এতে এসব ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা কৃষকদের।

রাজাপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, চলতি বছরে ১১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমির ধান এখনও মাঠে রয়েছে।

ঝালকাঠিতে বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে ধান

উপজেলা সদরের পিংড়ি, বাড়ইবাড়ি, পুকুরিজানা, সাউথপুর, সাংগর, মানকিসুন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে ধান গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ধানের ছড়া পানির মধ্যে ডুবে রয়েছে। আর খেসারি ডাল ও শীতকালীন সবজির বাগানে জমেছে পানি।

সাউথপুর এলাকার কৃষক আমির হোসেন জানান, এ বছর আমনের ফলন ভালো হয়েছিল। তবে ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমায় সব ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর নিউজবাংলাকে জানান, আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়লেও তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কারণ ধান অনেক আগেই পরিপক্ব হয়ে গেছে। খেসারি ডালের ক্ষেতে জমা পানি দু-এক দিনের মধ্যে না নামলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নড়াইল প্রতিনিধি রিফাত-বিন-ত্বহা, মাদারীপুর প্রতিনিধি সাগর হোসেন তামিম, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি মঈনউদ্দিন সুমন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি আব্বাস হোসেন ও ঝালকাঠি প্রতিনিধি হাসনাইন তালুকদার দিবস।

এ বিভাগের আরো খবর