বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্যাস ও আগুনে নারায়ণগঞ্জে দুই বছরে ১১৮ মৃত্যু

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:৩১

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা বন্ধ থাকা অবস্থায় লিকেজ থেকে ঘরে গ্যাস জমে গেলেই বিপদ। কারণ এ সময় বৈদ্যুতিক সুইচ অথবা চুলা জ্বালানো হলেও বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটবে। সেখানে থাকা মানুষ মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই দগ্ধ হয়ে যাবে।

একের পর এক গ্যাস বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দাদের জন্য। এ ধরনের ঘটনায় ওই জেলায় দুই বছরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১৮ জন। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক মানুষ।

বেশির ভাগ ঘটনাতেই থানায় অপমৃত্যুর মামলা হলেও এগুলোর যথাযথ তদন্ত হয়নি। ফলে এত মৃত্যুর পরও দায়ীদের চিহ্নিত করার কোনো উদ্যোগ নেই। এতে এ ধরনের দুর্ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলছে।

চলতি বছর এই জেলায় ১১৭টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দগ্ধ ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে আরও অর্ধশত মানুষকে। ২০২০ সালেও একই রকম ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৪ জন।

এসব তথ্য ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় উল্লেখ থাকলেও দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া অনেকের তথ্য অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাসাবাড়িতে গ্যাস পাইপ লিক করে বিস্ফোরণের অধিকাংশ কারণ অসচেতনতা ও অবহেলা। দেখা যায়, অনেকে বাড়ির লাইনে লিকেজের কথা জেনেও তা মেরামত করেন না। দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় তিতাস গ্যাসের পাইপগুলোতে প্রায়ই লিকেজ হয়ে যায়।’

তিনি জানান, ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা বন্ধ অবস্থায় তিতাসের গ্যাসলাইন বা গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ লিক হয়ে রুমে গ্যাস জমে গেলেই বিপদ। কারণ এ সময় বৈদ্যুতিক সুইচ কিংবা চুলা জ্বালানো হলেও বিস্ফোরণ ঘটে আগুন ছড়িয়ে যাবে এবং মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই সেখানে থাকা মানুষ দগ্ধ হবেন।

ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় আছে, ২০২১ সালের ৩১ সেপেম্বর পর্যন্ত রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১৮টি ঘটনা ছাড়াও তিতাসের লাইনের ত্রুটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে ৭১টি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বয়লার বিস্ফোরণ ও বৈদ্যুতিক কারণে আরও ২৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এ ছাড়া নভেম্বরের শুরু থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৫টি ঘটনা মিলে মোট ১১৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এ বছর।

এসব ঘটনায় অন্তত ৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।

এর মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর ভোরে আড়াইহাজারের কুমারপাড়া গ্রামের একটি বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার লিক করে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে দুই শিশুসহ এক পরিবারের চারজন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে সোলাইমান নামের একজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার এক দিন আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিলাসনগর এলাকায় একটি ছয়তলা ভবনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন চারজন।

৫ ডিসেম্বর ফতুল্লার বিলাসনগর এলাকায় একটি ছয়তলা ভবনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন চারজন

গত ২৫ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের আদনান টাওয়ারের চতুর্থ তলায় গ্যাসের পাইপ লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে পারভেজ ও মামুন নামে দুই পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার চার দিন আগে রূপগঞ্জে সিটি অটো রাইস মিলে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ২ শ্রমিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

১২ নভেম্বর ফতুল্লার পূর্ব শেয়াচরের লালখা এলাকায় একটি ৫ তলা বাড়ির নিচ তলায় গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাসে বিস্ফোরণে মায়া রানী দাস, মঙ্গলী রানী দাস, ঝুমা রানী ও তুলসী রানী নামে চার নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

৯ মার্চ রাতে ফতুল্লার মাসদাইরের পতেঙ্গা এলাকায় ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠতলার একটি ফ্ল্যাটে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৬ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পোশাক শ্রমিক মো. মিশাল, শিশুপুত্র মিনহাজ, চাচাতো ভাই মাহফুজ ও স্কুলছাত্র সাব্বির হোসেনের মৃত্যু হয়।

শহরের আমলাপাড়ায় গ্রিন জিএম গার্ডেন নামের একটি ভবনের আটতলায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে দগ্ধ দুজনের মধ্যে চিকিৎসাধীন একজন মারা যান।

এর আগে শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় তিনতলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে শিশুসহ দুটি পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

৭ জানুয়ারি ফতুল্লার বিলাসনগরে একটি দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে রফিক উল্লাহ নামের এক মিস্ত্রি মারা যান। আড়াইহাজারে একটি রেস্তোরাঁয় গ্যাসের লাইনে বিস্ফোরণে তিনজন দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন ১ জনের মৃত্যু হয়।

বন্দরের লক্ষণখোলা এলাকায় একটি তুলার গোডাউনে আগুন লাগলে আমেনা বেগম নামের এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

২৩ জুন ফতুল্লায় একটি ডাইং কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে শরীফ মিয়া নামের এক শ্রমিক মারা যান। তা ছাড়া বন্দরে রান্না ঘরের গ্যাসের আগুনে ৫ জন দগ্ধ হন। সোনারগাঁর নয়াবাড়ি এলাকায় একটি ডাইং কারখানায় গ্যাস রাইজারের আগুনে দগ্ধ হন আরও পাঁচজন। শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় অ্যাপোলো নামের একটি ক্লিনিকে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুজন ওয়ার্ড বয়ও দগ্ধ হয়েছেন।

হাসেম ফুডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ৫৪ জন

তবে এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে রূপগঞ্জের হাসেম ফুডের কারখানার অগ্নিকাণ্ডে। ওই ঘটনায় নিহত ৫৪ জনের দেহাবশেষ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের ২০২০ সালের খাতায় দেখা গেছে, এ জেলায় গ্যাস থেকে ১০৬টি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ওই সব অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দগ্ধ ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে অন্তত ২৬ জনকে।

এর মধ্যে তল্লায় মসজিদে এক বিস্ফোরণেই মৃত্যু হয় ৩৭ জনের। ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে সদর উপজেলার সাহেবপাড়া এলাকায় পাঁচতলা ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস ছড়িয়ে বিস্ফোরণ ঘটলে একই পরিবারের ৮ জন দগ্ধ হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়। একই বছর রূপগঞ্জে একটি রড প্রস্তুতকারক কারখানায় গলিত লোহা বার্টি বিস্ফোরণে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও চারজন শ্রমিক দগ্ধ হন।

এ বিভাগের আরো খবর