কুসংস্কারের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি নারীর চোখে মুক্তি স্বপ্ন একে দেয়া বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে।
বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার সব কিছু এ দেশে হলেও তার কবর ভারতের কলকাতা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে পানিহাটি সোদপুরে।
মহীয়সী এ নারীর দেহাবশেষ ভারত থেকে এনে পায়রাবন্দের নিজ গ্রামে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করার দাবি উঠেছিল এক যুগ আগে। তখন এটি নিয়ে উদ্যোগ নেয়া হলেও দীর্ঘ সময়ে তার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বেগম রোকেয়ার অনুরাগীরা জানান, ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বরে কলকাতায় মৃত্যু হয় তার। কলকাতার সোদপুর পানিহাটিতে তাকে দাফনে তখন বাধা দিয়েছিলেন স্থানীয়রা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বেগম রোকেয়াকে স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের বন্ধু ব্যারিস্টার আব্দুর রহমানের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সেখানেই রয়েছে তার সমাধি।
পায়রাবন্দবাসী জানান, ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর পায়রাবন্দ কলেজ মাঠে ‘রোকেয়া মেলা’-র আলোচনা সভায় তার ভাইয়ের মেয়ে রনজিনা সাবের দাবি তোলেন বেগম রোকেয়ার দেহাবশেষ কলকাতা থেকে ফিরিয়ে আনার।
ওই সময় মঞ্চে থাকা রংপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক বি এম এনামুল হক সেই দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। উদ্যোগও নেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সংগঠনও সেই দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলন করে।
রংপুর জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে বেগম রোকেয়ার দেহাবশেষ আনা নিয়ে তার পরিবার ও স্থানীয়দের বিভিন্ন দাবি সংবলিত একটি লিখিত আবেদন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠান জেলা প্রশাসক বি এম এনামুল হক।
বেগম রোকেয়ার আঁতুড়ঘর। ছবি: নিউজবাংলা
রোকেয়ার স্বজনদের অভিযোগ, ২০১০ সালে ডিসির আবেদনের পর প্রতি বছর আলোচনা হলেও দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনতে কাগজে-কলমে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
রনজিনা সাবের বলেন, ‘আমরা হতাশ-ক্ষুব্ধ। রোকেয়ার সবকিছুই আছে পায়রাবন্দে। বেদখল হলেও আছে তার বাবার জমিদারি সম্পদ। বাবা-চাচার কবরও, কিন্তু তিনি পড়ে আছেন কলকাতায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ডিসি এনামুল স্যারকে অনুরোধ করে বললাম, রোকেয়ার দেহাবশেষ কলকাতা থেকে পায়রাবন্দে আনার জন্য। তিনি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি ঢাকাতে আবেদন পাঠিয়েছেন বলে আমরা শুনেছি। ‘এরপর তার বদলি হয়, অনেক খোঁজ নিয়েছি, অনেকবার বলেছি, অনেকবার। খোঁজ নিলেই বলে, প্রক্রিয়াধীন আছে। পরে কী হইল তাও জানিনে। বছর বছর ডিসেম্বর আসে, আর আলোচনা হয়, কামের কাম নাই।’