২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে নেত্রকোণা শহর।
নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’য়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আত্মঘাতী সদস্যরা সেদিন হামলা চালিয়েছিল অজহর রোডে উদীচীর জেলা সংসদ কার্যালয়ে।
সেই হামলায় প্রাণ হারান উদীচীর গণসংগীত শিল্পী খাজা হায়দার হোসেন ও নাট্যশিল্পী সুদীপ্তা পাল শেলীসহ আটজন প্রাণ হারান।
হামলায় নিহত অন্য ছয়জন হলেন মোটর গ্যারেজ শ্রমিক যাদব দাস, গৃহিণী রানী আক্তার, মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন, রিকশাচালক রইছ উদ্দিন, ভিক্ষুক জয়নাল আবেদীন ও আত্মঘাতী জঙ্গি কিশোর কাফি। এ ছাড়া আহত হয় আরও অন্তত ৬০ জন।
বর্বরোচিত সেই হামলার ১৬ বছর আজ বুধবার। নেত্রকোণার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রতি বছর দিনটিকে ‘নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন।
নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস উদযাপন কমিটির ব্যানারে এবারও নেয়া হয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। হামলার সময়টিতে এ দিন পাঁচ মিনিট স্তব্ধ থাকবে নেত্রকোণা শহর।
কমিটির সদস্য সচিব মারুফ হাসান খান অভ্র জানান, কর্মসূচির শুরুতে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে উদীচী কার্যালয়ের সামনে কালোপতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে। সকাল সাড়ে ৯টায় অজহর রোডে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে করা হবে পুষ্পস্তবক অর্পণ।
সকাল ১০টা ৪০ থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত (বোমার হামলার সময়) পাঁচ মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে পালন করা হবে ‘স্তব্ধ নেত্রকোণা’ কর্মসূচি। এই পাঁচ মিনিট শহরের প্রধান সড়কে কোনো ধরনের যানবাহন চলবে না। পথচারীরাও দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করবেন।
বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে বের করা হবে প্রতিবাদী মিছিল। সব শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মঞ্চে হবে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সমাবেশ এবং দেশাত্ববোধক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে ভয়াবহ সেই বোমা হামলার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও হামলায় নিহতদের পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
নিহতদের মধ্যে খাজা হায়দার হোসেন, সুদীপ্তা পাল শেলী ও যাদব দাস ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের প্রত্যেকের পরিবার এখন নানা কষ্টে দিন পার করছে।
খাজা হায়দার হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম একটি স্থানীয় এনজিওতে চাকরি করতেন। দুই বছর আগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অসুস্থতায় বড় ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শাহনাজ। ঠিকমতো দিতে পারছেন না বাসা ভাড়াও।
শেলীর মা অরুণা পাল ও বাবা সুনীল পালের বয়স হয়েছে। দুই বৃদ্ধ এখন নানা রোগে আক্রান্ত তাদের। চিকিৎসা খরচ, বাসা ভাড়া ও সংসার খরচ চালানোই দায় তাদের।
এ ছাড়া মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন ও রিকশাচালক রইছ উদ্দিনের পরিবারের অবস্থাও তথৈবচ।
উদীচীর জেলা সংসদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শেলী ও হায়দারের পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে কিছু সহযোগিতা করেছেন, কিন্তু পরিবারগুলোর স্থায়ী পুনর্বাসন দরকার।’