তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা মুরাদ হাসানের জন্য অঝোরে কেঁদেছেন এমডি রানা সরকার নামে জামালপুরের এক যুবলীগ নেতা। ১৫ মিনিটের ফেসবুক লাইভে তার কান্নার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মাত্র ২২ ঘন্টার ব্যবধানে ওই ভিডিওতে লাইক পড়েছে ১৫ হাজার, কমেন্ট পড়েছে ৬ হাজার ৪০০, শেয়ার করেছেন ৭৪১ জন ও ভিডিওটি দেখেছেন প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ।
এমডি রানা সরকার জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা যুবলীগের সদস্য। তিনি নিজেকে মুরাদ হাসানের সক্রিয় কর্মী হিসেবেই পরিচয় তুলে ধরেছেন।
ওই ভিডিওটিতে তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী। দুঃসময়ের নেতাকর্মীরা মুরাদের কাছ থেকে কোনো সুবিধা নিতে না পারলেও অসংখ্য নতুন কর্মী বাগিয়ে নিয়েছেন বহু সুযোগ সুবিধা।‘
তিনি বলেন, ‘তিনি বিভিন্ন সময় ভুল বক্তব্য দিতেন। পাশে থাকা সুবিধাভোগী তৈলবাজ নেতা-কর্মীরা ভুল ধরিয়ে দেয়ার পরিবর্তে আরও উৎসাহ দিয়েছে। ফলে ভুলভাল মন্তব্যে বার বার সমালোচিত হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী (এখন আর পদে নেই)।’
যুবলীগের এই নেতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার নেতা এখন সবই হারিয়েছে। তার এমন দুঃসময়ে বর্তমানে কোনো নেতাকর্মী তার পাশে নেই৷’
নেতার জন্য দোয়া চেয়ে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন রানা সরকার।
যুবলীগ নেতার আবেঘজড়ানো এই ভিডিও দেখে তাকে তোষামোদকারী উল্লেখ করে হাসি-তামাশায় মেতেছেন ফেসবুকাররা।
আরমান আলী নামে একজন কমেন্ট করে দাবি করেন, রানা অভিনয় করেছেন।
সাদ্দাম হোসেন নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘মুরাদকে আজীবনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার চাই।‘
আতাউর রহমান লিখেন, ‘মুসলিম জাতির কাছে ভালো করে ক্ষমা চাইতে বলেন।’
ফেসবুক লাইভে এসে কান্নাকাটি করার কারণ জানতে যুবলীগ নেতা রানা সরকারের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। প্রথমে তিনি ফোন রিসিভ করলেও পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেন।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মুরাদ হাসানের বক্তব্য সম্বলিত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে ‘অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
তার ওই বক্তব্যের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছিলেন নারী অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সে সময় প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিও উঠেছিল।
এর মধ্যে এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে তার ফোনালাপ ভাইরাল হয়। সেই নারীকে তিনি তার কাছে যেতে বলেন। না গেলে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে উঠিয়ে নেয়ার হুমকি দেন। তার কাছে গেলে ধর্ষণ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও অবমাননাকর বক্তব্য রাখেন আরেকটি অনলাইন আলোচনায়।
মুরাদকে বহিষ্কারে বিএনপি, নাগরিক সমাজ, নারী অধিকার কর্মী ও ছাত্রলীগের নারী কর্মীদের দাবির মধ্যে সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্ত জানান। মুরাদকে মঙ্গলবারের মধ্যে পদত্যাগের নির্দেশ দিলে তিনি পদত্যাগ করেন।