প্রতিমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন, আওয়ামী লীগে দলীয় পদ যাওয়া এখন কেন্দ্রের ঘোষণার ব্যাপার। মুরাদ হাসানের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না-এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
তবে এ বিষয়ে সংবিধানে অস্পষ্টতা রয়েছে। আর দল বহিষ্কার করলে এখন পর্যন্ত কারও সদস্য পদ খারিজের উদাহরণও নেই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দল তাকে সকল পদ থেকে বহিষ্কার করলে তার সংসদ সদস্য পদ চলেও যেতে পারে। তবে এই বিষয়টি স্পিকারের রুলিংয়ের ওপর নির্ভর করছে।
মঙ্গলবার মন্ত্রিত্ব হারানোর পর মুরাদকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকেও বহিষ্কারের প্রস্তাব দলের কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছেন, তারা দলে রাখবেন না নারীর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করা নেতাকে।
দল বহিষ্কার করলে সংসদ সদস্য পদ চলে যাবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেটা স্পিকারের বিষয়। এমপির বিষয়ে যদি গুরুতর কোনো অভিযোগ আসে তাহলে সেটা স্পিকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
মুরাদের বিষয়টিতে আওয়ামী লীগের সামনে এখন দৃষ্টান্ত হতে পারে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে হজ নিয়ে তার করা মন্তব্য দেশে তুমুল প্রতিক্রিয়া তৈরি করলে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। বহিষ্কার করা হয় দল থেকেও। কিন্তু সংসদে সদস্য পদ থেকে যায়।
এ নিয়ে তখনও বিতর্ক ওই বছরের ১৩ জুলাই সে সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ থাকা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়।
তবে ১ সেপ্টেম্বর সংসদে উপস্থিত হয়ে লতিফ সিদ্দিকী এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো এখতিয়ার থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করে নিজেই পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘আমার নেতার অভিপ্রায়, আমি যেন সংসদ সদস্য পদে না থাকি। কারো প্রতি কোনো ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রকাশ করব না, অভিযোগও নয়। আমি জাতীয় সংসদ ১২৩, টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে পদত্যাগ করছি।’
নবম সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে জিতে আসা এম এ জব্বারকে বছর তিনেকের মাথায় দল থেকে বহিষ্কার করে দল। সে সময় দলের পক্ষ থেকে তার সংসদ সদস্য পদ খারিজের অনুরোধ করা হয় স্পিকারের কাছে। কিন্তু স্পিকার রুলিং দিয়ে বলেন, তিনি যেহেতু দলের বিরুদ্ধে ভোট দেননি, তাই তার সদস্য পদ যাবে না। নবম সংসদের পুরো মেয়াদেই তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন।
মুরাদ হাসানের ক্ষেত্রে বিষয়টি কেমন হবে- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু উনি দল থেকে মনোনীত সংসদ সদস্য, যদি দল উনাকে বহিষ্কার করে, এর পর দল থেকে স্পিকারকে জানানো হয় সে ক্ষেত্রে তার সংসদ সদস্য পদ না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য হিসেবে উনি আবেদন করতে পারবেন।‘
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংসদীয় প্রদ্ধতিতে কতগুলো ধারা আছে। সে অনুসারে সবকিছু হবে। তবে এই মুহূর্তে সব কিছু বলতে পারছি না।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিনি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েছেন আওয়ামী লীগের লীগের প্রার্থী হিসেবে। যুক্তি হিসেবে বলা যায়, দল বহিষ্কার করলে তার এমপি পদ থাকে না। কারণ, তিনি তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে নাই। কিন্তু সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে যেটা বলা হয়েছে, তিনি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন তাহলে তার পদ শূন্য হবে।’
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি যদি দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে তার আসন শূন্য হবে।
১৯৯৮ সালে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে সংবিধান অনুসারে সংসদ সদস্য পদ হারান তৎকালীন সিরাজগঞ্জ-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব-উল-আলম জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্যপদ খোয়ান বিএনপির আখতারুজ্জামান। তখন বিএনপি তাকে বহিষ্কার করে, পাশাপাশি স্পিকারকে চিঠি দিয়ে তার সদস্য পদ খারিজের অনুরোধ করে।
দলীয় সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি নেতা যান হাইকোর্টে। ওই মামলায় হাইকোর্ট বলেছিল, যেহেতু তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন এবং দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে গিয়েছেন, তাই তার সদস্য পদ বাতিল হবে।