অভিযোগ আছে, তুলে নিয়ে বিয়ে করেছিলেন প্রেমিকা ইশরাত জাহান পাখি। সে ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে প্রেমিকার বিরুদ্ধে অপহরণের মামলাও করেন নাজমুল হাসান। সে বিয়ের ৪৩ দিনের মাথায় নাজমুলের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন পাখি। সে মামলায় এখন কারাগারে নাজমুল।
এ ঘটনা পটুয়াখালী সদরের। স্ত্রীর যৌতুকের মামলায় নাজমুলকে সোমবার জেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারক আশিকুর রহমান তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নাজমুল এতদিন আত্মগোপনে ছিলেন। সোমবার আদালতে জামিনের আবেদন করতে হাজির হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, ‘আমরা আগে অপহরণের মামলা করি। সেই মামলা থেকে গা বাঁচানোর জন্য আসামি পরে মিথ্যা যৌতুকের মামলা দেয়। আগামী সপ্তাহে আমরা আবার নাজমুলের জামিনের আবেদন করব।’
যেভাবে ঘটনার শুরু
গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ফেসবুকে ভাইরাল হয় একটি ভিডিও, যাতে দেখা যায় নাজমুল ও পাখি পাশাপাশি দুটি চেয়ারে বসে আছেন। নাজমুলের পেছনে দাঁড়ানো একজন তার ঘাড়ের দুই পাশ ধরে আছেন। অন্য পাশ থেকে পাখি ও নাজমুলের মুখে মিষ্টিজাতীয় কিছু তুলে দিচ্ছেন। সেখানে নাজমুলকে চুপচাপ দেখা গেলেও তরুণী ছিলেন চঞ্চল।
এই ভিডিও পোস্ট করে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা দাবি করেছিলেন, প্রেমিককে তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করেছেন প্রেমিকা।
বিয়ের এই ঘটনা গত ২৭ সেপ্টেম্বরের বলে নাজমুল ও পাখির আইনজীবী নিশ্চিত করেছেন।
নাজমুলের আইনজীবী আবদুল্লাহ জানান, এ ঘটনার পর নাজমুল গত ৩ অক্টোবর পটুয়াখালী জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে অপহরণ ও জোর করে তুলে নিয়ে সই নেয়ার অভিযোগে মামলার আবেদন করেন। আসামি করা হয় পাখিসহ ছয় থেকে সাতজনকে।
পরে বিচারক মামলাটি নথিভুক্ত করতে পটুয়াখালী সদর থানাকে নির্দেশ দেন।
পাখির আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জানান, যৌতুকের অভিযোগে পাখি গত ৯ অক্টোবর নাজমুলের নামে সদর থানায় মামলা করেন।
যা বলেছেন নাজমুল ও পাখি
ঘটনার পরপর নাজমুল জানান, কয়েক মাস ধরে তাকে মেসেঞ্জারে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন পাখি, কিন্তু রাজি হননি তিনি। একপর্যায়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়া হয়। তাতেও রাজি ছিলেন না নাজমুল।
একপর্যায়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাত থেকে আটজন পুরুষ শহরের লঞ্চঘাট এলাকা থেকে নাজমুলকে তুলে নিয়ে যান। অজ্ঞাত এক স্থানে নিয়ে জোর করে কাবিননামায় সই রেখে দেন।
নাজমুল বলেন, ‘আমাকে জোর করে মিষ্টি খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। পরে সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিছুদিন পরে মিষ্টি খাওয়ানো আর সই নেয়ার ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। একপর্যায়ে আইনের আশ্রয় নেই।’
অভিযোগ অস্বীকার করে পাখি বলেন, নাজমুলের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। তার ইচ্ছাতেই বিয়ে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যতটুকু ঝামেলা হয়েছে তা শুধু কাবিননামার টাকা নিয়ে। আমিসহ আমার বড় ভাইদের দাবি ছিল কাবিন ৫ লাখ টাকা হবে। আর নাজমুল চেয়েছে, কাবিন ৫০ হাজার টাকা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে সামান্য একটি ঝামেলা হয়েছে, যেটা ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে।’
ইশরাত বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ গত ২৭ তারিখ আমাদের বিয়ে হয়েছে ঢাকাতে বসে। আর ২৭ তারিখ আমি নাকি ওকে (নাজমুল) পটুয়াখালী শহর থেকে অপহরণ করেছি। এক দিনে আমি দুই জায়গায় থাকি কীভাবে?’
নাজমুল অবশ্য পাখির সব বক্তব্য অস্বীকার করে আগের অভিযোগেই অটল ছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, পুলিশের প্রতিবেদন ও আদালতের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।