তিস্তাসহ অমীমাংসিত সব ইস্যু সমাধানে রাজি হয়েছে ঢাকা ও নয়াদিল্লি। একইসঙ্গে সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র বের করে পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ও ভারত। কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান এক সময় বাংলাদেশে হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ভারতের দার্জিলিংয়ের অধিবাসী এই কূটনীতিক। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন তাকে স্বাগত জানান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সফরের প্রস্তুতি সারতে শ্রিংলার এই সফর। শুরুতেই তিনি রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এরপর তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তিনি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বৈঠক নয়, এটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। তবে কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা প্রসঙ্গে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। তবে বড় রকমের কোনো ভিন্নতা পাইনি। এখানে কেবল আছে এগিয়ে নেয়ার মতো ক্ষেত্রগুলো।
‘আমরা সবুজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল সহযোগিতার মতো ভবিষ্যৎমুখী বিষয়গুলোর দিকে নজর দিচ্ছি। যেসব বিষয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করবে, যা আমাদের উভয় দেশের জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘গত ১০ বছরে আট শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছে ভারত।
‘শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় চলছে- এমনটা দুই দেশের কর্মকর্তারাই বলে আসছেন।’
শ্রিংলা বলেন, ‘কানেক্টিভিটির জায়গায় আমরা দু’দেশ অনেক ভালো করেছি। ১৯৬৫ সালের আগের পাঁচটি রেল যোগাযোগ ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। আশা করি, ৬ নম্বর রেল সংযোগ (আখাউড়া-আগরতলা) আগামী বছর চালু হবে।
‘তবে ভারত এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে নৌপথ সংযোগকে। রেল যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি নৌপথসহ অন্যান্য দিকেও যোগাযোগ বাড়ানোর কাজ চলছে। নৌক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনা বেশি। এটা পরিবেশসম্মতও।’
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ৫০ মিনিটের আলোচনাকে ‘খুব সফল’ বলে উল্লখ করে বলেন, “দুই দেশের সম্পর্কে ‘স্বর্ণযুগ’ চলছে। এ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। একই বছরে ভারতের রাষ্ট্রপতিও বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এটি একটি রেকর্ড।”
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক ইস্যু রয়েছে। অনেক পেন্ডিং ইস্যু রয়েছে। সেগুলো আমরা আলোচনা করেছি…।
‘কানেক্টিভিটি রিলেটেড ইস্যুজ, গ্রিন এনার্জি ও কো-অপারেশন এনার্জি এবং টেকনোলজির নতুন নতুন যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।’
ঝুলে থাকা বিষয়গুলো কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘আরও শান্তিপূর্ণ বর্ডার কিভাবে আমরা করতে পারি তা নিয়েও কথা হয়েছে।‘
কোভিড সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের অনেক ধরন এসেছে। এখন এসেছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। সামনে আরও আসতে পারে। সুতরাং কোভিড কো-অপারেশনও আমাদের মধ্যে চলমান রাখতে হবে।
‘বাংলাদেশ কখনোই সেফ থাকবে না, যদি ভারত সেফ না থাকে। একইভাবে ভারত সেফ থাকবে না যদি বাংলাদেশ সেফ না থাকে। এটা সারা বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সুতরাং আমাদের কো-অপারেশন করা ছাড়া অন্য কোনো সুযোগ নেই।’
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও বাংলাদেশ-ভারত পারষ্পরিক অমীমাংসিত বিষয়গুলো সুরাহার পাশাপাশি সংযুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন শ্রিংলা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, ‘আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব শিগগির দিল্লি সফর করুন। গত মার্চে ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেটি এখনো বহাল। দু’দেশের মধ্যে এই সফর কোন সময়ে সুবিধাজনক হবে তা নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। বর্তমানে করোনা বিশেষ করে নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে উদ্বেগ আছে। তবে যত শিগগির সম্ভব তিনি ভারত সফর করুন-এটা আমরা চাই।‘
অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকটি ছিল সৌজন্যমূলক। আমরা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা নিজে থেকেই বর্ডার ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। পানি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে তাদের তাড়া দিয়েছি।’