ভারতীয় নাগরিক মায়ের অজান্তে শিশুসন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন বাংলাদেশি বাবা। আদালতের আদেশ না মেনে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ী শাহীনুর টিআইএম নবীকে ফেরাতে তার বাবাকে আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালত বলেছে, ‘১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে শিশুসহ বাবাকে দেশে নিয়ে আসেন। না হলে এর পরিণতি কী হয়, সেটা বলা যাবে না।’
ভারতীয় নাগরিক এক মায়ের করা আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। অন্যদিকে বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান।
এর আগে আদালত শিশুর দাদাকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। আদালতের আদেশে শিশুর দাদা টিএম নবী মঙ্গলবার আদালতে হাজির হন। এ সময় দাদার পক্ষে আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান সময় চেয়ে আবেদন করেন।
পরে আদালত ১৪ ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ ঠিক করে দেয়।
বাংলাদেশির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া ভারতীয় নারী মা সাদিকা সাঈদ তার আড়াই বছরের ছেলেসন্তানের জিম্মা চেয়ে আবেদন করলে গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট তার পক্ষে আদেশ দেয়।
আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সে সময় বলেন, ‘উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত শিশুকে মায়ের জিম্মায় দিয়েছে। বাবা সপ্তাহে তিন দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুকে নিজের কাছে নিতে পারবেন। একই সঙ্গে মায়ের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা দিতে বলেছে আদালত।’
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চের এ আদেশ বহাল থাকা অবস্থাতে শিশুটির বাবা ব্যবসায়ী শাহীনুর টিআইএম নবী অস্ট্রেলিয়া চলে যান শিশুসহ।
আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ জানান, ভারতের বিয়েসংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামে এক নারী পছন্দ করেন বারিধারার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহীনুর নবীকে। হায়দরাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের এ নারীর সঙ্গে শাহীনুরের বিয়ে হয় ২০১৭ সালে।
হায়দরাবাদে ঘটা করে বিয়ের পর তারা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন। কয়েক মাস পর ওই দম্পতি ঢাকায় চলে আসেন।বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর এ দম্পতির সংসারে অশান্তি শুরু হয়। সাদিকা সাঈদ শেখকে মারধর করেন তার স্বামী। ভারতের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিষয়টি ভারতে সাদিকার আত্মীয়স্বজন জানতে পেরে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করেন।
বিষয়টির সমাধান না হলে সাদিকার বোন মানবাধিকার সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান। এর মধ্যে সাদিকাকে তালাক দিয়ে দেন স্বামী শাহীনুর নবী।
একমাত্র সন্তানের জিম্মা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলাকালেই শাহীনুর নবী হাইকোর্টের আদেশ না মেনে শিশুকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় হাইকোর্ট শাহীনুরের বাবাকে তলব করে সতর্ক করেছে এবং শিশুসহ শাহীনুরকে দেশে ফেরাতে নির্দেশ দিয়েছে।