পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাভোগকারী সেই ঝুমন দাস।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল এ বছর নির্বাচন না করায় নিজের প্রার্থিতা ও বিজয়ী হওয়া নিয়ে আশাবাদী ঝুমন।
এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে ঝুমন দাস বলেন, ‘অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল জনপ্রতিনিধি হয়ে সাধারণ মানুষের উপকার করা। বিগত নির্বাচনে অন্য প্রার্থীর হয়ে ভোট চেয়েছি, তাদের হয়ে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু নির্বাচিতরা পরে সেগুলো ভুলে গেছেন।’
‘মানুষের সেবা করতে নির্বাচন করতেই চাই। এ অঞ্চলের মানুষকে সহজ-সরল পেয়ে অনেক ক্ষতি করা হয়েছে। ১০ বছর ধরে বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আসছি। নিজের ইউনিয়নকে উন্নত ও ডিজিটাল করতে নির্বাচন করার কথা ভেবেছি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে এগিয়ে যাব। হেরে গেলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গেই থাকব।’
নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি থাকলেও ঝুমন এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অর্থের জোগান নিয়ে। পোস্টার, লিফলেট, আপ্যায়ন এসবের খরচ কীভাবে জোগাবেন তা নিয়ে রয়েছেন শঙ্কায়। নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ ব্যাপারে বিত্তবানদের সাহায্যও চেয়েছেন তিনি।
ঝুমন দাস বলেন, ‘মনোনয়ন কিনেছি কিন্তু এখনও জমা হয়নি। শুনেছি আমার মনোনয়ন বাতিল করতে কিছু কুচক্রী মহল কাজ করছে। তবে আমার কোনো ঋণ খেলাপি নাই, কৃষি ব্যাংকে ৫ হাজার টাকা ধার নেয়া ছিল, সেটিও পরিশোধ করেছি। তাই আমার মনোনয়ন বাতিলের কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। বিত্তবানরা সহযোগিতার হাত না বাড়ালে নির্বাচন খরচ জোগাতে পারব না। মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ দিতে দেশের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন বলেই বিশ্বাস করি।’
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কোন প্রতীক চান, প্রশ্নে ঝুমন দাস বলেন, ‘আমার প্রথম পছন্দ ঘোড়া। ঘোড়া না পেলে মোটরসাইকেল দ্বিতীয় পছন্দ।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ঝুমন দাস।
গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন।
এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন দিরাইয়ের পার্শ্ববর্তী উপজেলা শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন।
মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পরদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির। ঝুমনের স্ত্রী সুইটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।
শাল্লায় হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম, স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় প্রায় ৩ হাজার আসামি। পুলিশ নানা সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই জামিন পান।
শুধু জামিন পাচ্ছিলেন না ঝুমন দাস। বিচারিক আদালতে কয়েক দফা জামিন নাকচের পর ২৩ সেপ্টেম্বর জামিন পান ঝুমন।