চতুর্থবারের মতো পিছিয়েছে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ।
সিলেট সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমিন বিপ্লবের আদালতে মঙ্গলবার এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিল। তবে ঢাকার কারাগার থেকে এক আসামিকে আদালতে হাজির করতে না পারায় সাক্ষ্যগ্রহণ এবারও হয়নি।
আগামী ১৯ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য মোহাম্মদ মনির উদ্দিন এই তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর, ৮ নভেম্বর ও ২২ নভেম্বর সাক্ষীরা উপস্থিত না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
সাড়ে ছয় বছরেও চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ অনন্ত বিজয়ের স্বজনরা। তারা জানিয়েছেন, এই ধীরগতির কারণে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে তারা শঙ্কিত।
আইনজীবী মনির উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার যাদের সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল তারা হলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আরমান আলী, আইটি ফরেনসিক বিভাগের উপপরিদর্শক মাসুদ সিদ্দিকী ও উপপরিদর্শক সুহেল রানা।
আগের তিনটি তারিখে তারা অনুপস্থিত থাকলেও মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়েই আদালতে উপস্থিত হন। সিলেট কারাগারে থাকা আসামি আবুল খায়ের রশিদ আহমেদকেও আদালতে আনা হয়। তবে কাশিমপুর কারাগারে থাকা শফিউর রহমান ফারাবীকে হাজির না করায় সাক্ষ্য নেয়া হয়নি।
মনির আরও জানান, মামলার ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর বিষয়ে অনন্ত বিজয়ের বোন জামাই সমর বিজয় শী বলেন, ‘করোনা মহামারিতে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ অনেক পিছিয়ে গেছে। এখন স্বাভাবিক আদালত কার্যক্রমের মধ্যেও টানা চারবার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছে। ডিসেম্বর মাসে আদালত বন্ধ থাকবে। ফলে এ বছরও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হচ্ছে না। এতে বিচার পাওয়া নিয়েই আমরা শঙ্কিত।’
সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকায় ২০১৫ সালের ১২ মে নিজ বাসার সামনে খুন হন বিজ্ঞান লেখক ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
সে রাতেই অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
মামলাটি পুলিশ থেকে সিআইডিতে স্থানান্তরিত হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। এতে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযুক্তরা হলেন সিলেটের কানাইঘাটের আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মামুনুর রশীদ, কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন, কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ এবং সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার শফিউর রহমান ফারাবী।
এর মধ্যে ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ে দণ্ড পেয়ে কাশিমপুরে কারাগারে বন্দি। আসামি মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
অন্য আসামিরা পলাতক।
বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন অনন্ত বিজয়। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। কাজ করতেন সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে।