বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দল থেকে বাদ পড়ছেন মুরাদ

  •    
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:৫৮

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ সম্ভবত তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেবে। তিনি সেখানে স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।’

নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য ও ফোনালাপ ফাঁসের জেরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো মুরাদ হাসান দল থেকেও বাদ পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সচিবালয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ব্রিফিংয়ে তিনি এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, ‘জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ সম্ভবত তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেবে। তিনি সেখানে স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।’

কেন্দ্র থেকেও প্রাথমিক সদস্য পদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কাদের। বলেছেন, দলীয় ফোরামের পরবর্তী সভায় বিষয়টি তোলা হবে।

আওয়ামী লীগের নির্বাহী সংসদের সদস্য পদের কী হবে জানতে চাইলে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দলীয়ভাবে যেটা আমরা গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে নিয়েছিলাম।

‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত ওয়ার্কিং কমিটি ছাড়া করার কোনো সুযোগ নেই। পরবর্তী মিটিংয়ে তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা নেবো। মন্ত্রিসভা থেকে এখন পদত্যাগ করছে এবং দলীয় পদ ঢাকায় নেই, জামালপুরে আছে স্বাস্থ্য সম্পাদক, সে পদ থেকেও সম্ভবত তাকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে।’

দলীয় পদ হারালে সংসদ সদস্য পদের কী হবে-জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘সেটা তো পরের ব্যাপার। সেটা স্পিকারের বিষয়। এমপির বিষয়ে যদি গুরুতর কোনো অভিযোগ আসে তাহলে সেটা স্পিকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

‘একটা কথা বলতে চাই, যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। যেটা দেশবাসী প্রমান পেয়েছে। অপকর্ম যেই করুক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউই নন, এটা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। দলীয় পদ থাকার পরেও কোনো অপরাধীর পক্ষে দল দাঁড়ায় নি, কাউকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেনি। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করছে, সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ এখানে নেই। আমাদের অনেক মন্ত্রী, এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আছে, সাজাও হয়েছে অনেকের। অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না।’

তীব্র সমালোচনার মধ্যে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠান মুরাদ হাসান। এতে তিনি লিখেছেন, ‘গত ১৯ মে ২০২১ আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমি অদ্য ০৭.১২.২০২১ তারিখ হতে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব হতে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।…আমাকে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদানের লক্ষ্যে পদত্যাগ পত্রটি গ্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি।’

প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না মুরাদ হাসানকে। নিউজবাংলা জানতে পেরেছে ধানমন্ডির বাসা থেকে তিনি সোমবার বেলা ১১টার দিকে বের হন। ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও ফেরেননি।

মঙ্গলবার মুরাদের বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য ও সিকিউরিটি গার্ডরা জানান, বাসা থেকে বের হওয়ার পর এক দিন পেরিয়ে গেলেও ফেরেননি তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

সিকিউরিটি গার্ড সুমন বলেন, ‘স্যার কালকে বের হইছেন, এরপর আর আসেন নাই। কোথায় গেছেন জানি না।’

একই কথা জানান বাড়িতে থাকা পুলিশের একজন সদস্য। তিনি বলেন, ‘রোববার রাতে বাসায় আসেন মুরাদ হাসান। সোমবার বেলা ১১টার দিকে বের হয়েছেন। এখনও ফেরেননি।’

নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর’ ও ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য করে আগে থেকেই তীব্র সমালোচনার মধ্যে ছিলেন মুরাদ। এর মধ্যে ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপে এক চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।

এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবারের মধ্যে তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে বলে সোমবার জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

প্রতিমন্ত্রী রোববার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও সোমবার দিনভর নিজেকে আড়াল করে রাখেন। রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে তার যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তিনি তাতে যাননি।

তিন দিন আগে একটি অনলাইন টকশোয় এসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।

এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই ফেসবুকে একটি টেলিফোনালাপ ভাইরাল হয়। বলা হচ্ছে, এটি মুরাদের। সেখানে শোনা যায়, তিনি একজনকে ফোন করে এক চিত্রনায়িকাকে তার কাছে যেতে বলেন। এই কথোপকথনে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়।

মুরাদকে বরখাস্তের দাবি জানান ৪০ জন নারী অধিকারকর্মী। বিএনপির পক্ষ থেকেও প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়। বলা হয়েছে, মুরাদের ভাষা সভ্য নয়।

অনলাইন সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি যা বলেছেন, তার জন্য দুঃখিত নন। বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না। আর সমালোচনা তিনি গায়ে মাখেন না।

বিএনপিও প্রতিমন্ত্রী মুরাদের পদত্যাগ দাবি করে। পাশাপাশি ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরাও বলেন, মুরাদের মতো একজন নেতা মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন না।

চারদিকে তুমুল সমালোচনার মধ্যে আসে মুরাদকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। মুরাদকে মঙ্গলবারের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলায় সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অনেকে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তার কথা ও আচরণে বিব্রত ও লজ্জিত।’

মুরাদ জামালপুরের সরিষাবাড়ী থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে তার আসনটি জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবার তাকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনের পর মুরাদকে প্রথমে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়। একটি বেসরকারি হাসপাতালে আচরণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর