দেশের প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের মধ্যে। তবে সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে ঠিক সময়ে শেষ হয় মাত্র ৫০টির নির্মাণ কাজ। কাজ শেষ করতে এক বছর সময় বাড়নো হলেও হয়নি। তাই বেড়েছে সময় ও ব্যয়।
আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো এবং ৭১৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পটির সংশোধনী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়েছে।
রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একনেক সভা শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলায় মডেল মসজিদগুলোকে ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে। তরুণরা যাতে সংস্কৃতির দিক থেকে মনোযোগী হয় সেজন্য এখানে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। দেশে নতুন তিনটি উপজেলা হয়েছে। তাই মসজিদের সংখ্যা আর তিনটি বাড়বে।’
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, এরই মধ্যে ৫০টি উদ্বোধন করা হয়েছে। ১০০টির কাজ ৩-৪ মাসের মধ্যে শেষ হবে। বাকিগুলো নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে শেষ হবে।
শুরুতে এ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অর্থায়ন করার কথা ছিল সৌদি আরব সরকারের। তবে দেশটি রাজি না হওয়ায় দেশের টাকায় শুরু হয় কাজ। ২০১৭ সালে অনুমোদন পাওয়া মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। পরে অনুমোদিত প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় কিছুটা কমিয়ে করা ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।
এবার দ্বিতীয় সংশোধিত ব্যয় আগের চেয়েও বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। ফলে প্রথম সংশোধিত প্রকল্প থেকে দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৭১৩ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
সংশোধনী প্রস্তাবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) জানায়, নানা কারণে প্রকল্প সংশোধন প্রয়োজন। বিভিন্ন খাত, যেমন- অফিসারদের বেতন, বিদ্যুৎ, ফ্যাক্স, ইনটারনেট, নিবন্ধন ফি, পেট্রোল, লুব্রিক্যান্ট, গ্যাস ও জ্বালানি, অন্যান্য মনোহারি, মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ, অফিস সরঞ্জাম, ভবন নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ ছাড়া আপ্যায়ন ব্যয়, চুক্তিভিত্তিক যানবাহন ব্যবহার, ব্যাংক চার্জ, সাকুল্য বেতন, কুরিয়ার, যাতায়াত ব্যয়, আউটসোর্সিং, শ্রমিক মজুরি, নিয়োগ পরীক্ষা, মুদ্রণ ও বাঁধাই, অন্যান্য মনোহারি (গণপূর্ত), ডিজাইন ও ড্রইং (গণপূর্ত), আসবাবপত্র মেরামত ও সংরক্ষণ, কম্পিউটার মেরামত ও সংরক্ষণ কাজ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অফিস সরঞ্জামাদি মেরামত ও সংরক্ষণ, অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামত ও সংরক্ষণ, অভ্যন্তরীণ শোভাবর্ধন কাজ অন্তর্ভুক্ত করায় মূলত ব্যয় ও সময় বাড়ছে।
চলতি বছরের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৫০ মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্যোগী ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, ৪৩ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে প্রতিটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলা পর্যায়ে ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা (নীচ তলা ফাঁকা) মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ-ক্যাটাগরিতে প্রতিটি জেলা শহর ও ৩টি সিটি করপোরেশনে ৫টিসহ ৬৯টি, বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি এবং সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।
এতে নারী ও পুরুষের পৃথক অজু ও নামাজের জায়গা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হেফজখানা, গণশিক্ষা কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র, পাঠাগার, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, জানাজার ব্যবস্থা, হজ্জযাত্রীদের নিবন্ধন, অটিজমকর্ণার, ই-কর্নার, বিদেশি পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের অগ্রগতি সনোসজনক নয়। আর্থিক অগ্রগতি ১৮ শতাংশের মতো। বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ। তবে, অনুমোদন পাওয়ার প্রায় ১ বছর বৈদেশিক অর্থায়ন জটিলতায় কাজ থেমে থাকে।