তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান একসময় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ক্ষমতার পালাবদলে তিনি সংগঠন পাল্টে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ নেতা বনে যান। তৎকালীন ছাত্র নেতারা বলছেন, দীর্ঘ এক বছর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেন মুরাদ।
ছাত্রদলের নেতারা জানান, ১৯৯৩ সালে এম-৩০ ব্যাচে মুরাদ হাসান এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রদলের ৭১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে সভাপতি পদে মাহবুব-উল কাদির, সাধারণ সম্পাদক পদে মো. ইসাহাক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নিয়াজ শহীদ রানা ও প্রচার সম্পাদক পদে মুরাদ হাসান দায়িত্ব পান।
তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. ইসাহাক নিউজবাংলাকে বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ছাত্রদলের কমিটির নেতারা সবাই ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যান। তবে মুরাদ হাসান ক্যাম্পাসে থেকে যান। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে তিনি ছাত্রলীগে যোগ দেন।
১৯৯৮ সালে বাদল-বিজয় কমিটিতে প্রথমে কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০০০ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মুরাদ। তখন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাদি।
এম-২৯ ব্যাচের ছাত্র ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ময়মনসিংহ মহানগরের সদস্যসচিব ডা. মো. সায়েম মনোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেন মুরাদ হাসান। পরে তিনি ছাত্রদলের খোলস পাল্টে ছাত্রলীগে যোগদান করেন। সুবিধাভোগী নেতা মুরাদ।’
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, মুরাদ ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করার সময় মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। এরপর কলেজ শাখা ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দিয়ে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মহাসচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ কলেজে ১৫ ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। তবে কলেজ ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেয়া মুরাদ হাসানের নাম শুনেছি। তিনি সরকারের একজন দায়িত্বশীল প্রতিমন্ত্রী হয়ে মূর্খের মতো বক্তব্য দিয়েছেন। তাকে ঘৃণা প্রকাশ করার কোনো ভাষা নেই।’
সম্প্রতি একটি অনলাইন টকশোতে এসে মুরাদ হাসান যে ভাষায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার নাতনি জাইমা রহমানকে আক্রমণ করেন, সেটিতে নিন্দার ঝড় ওঠে। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে অশালীন ভাষায় ঘায়েল করার এই চেষ্টার পর প্রতিবাদ জানায় বিএনপি। নারী নেত্রীরাও এর সমালোচনা করেন। তিনি এই ধরনের বক্তব্য দিয়েও কীভাবে মন্ত্রিসভায় থাকেন, সেই প্রশ্ন তোলে বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন।
এর মধ্যে প্রতিমন্ত্রীর কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চান, তিনি দুঃখ প্রকাশ করবেন কি না। জবাবে মুরাদ বলেন, তিনি বক্তব্যে অটল আর রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সমালোচনাকে গা করছেন না।
এর মধ্যে ফেসবুকে একটি ফোন রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে, যাতে পুরুষ কণ্ঠের একজন মুরাদ হাসান বলে চিহ্নিত হন। তিনি একজন চিত্রনায়িকাকে তার কাছে যেতে বলেন। না গেলে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তুলে নেয়ার হুমকি দেন। আর সেই নায়িকাকে ধর্ষণ করার ইচ্ছাও পোষণ করেন।
এর আগে আরও একটি অনলাইন সাক্ষাৎকারে মুরাদ হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়েও করেন আপত্তিকর মন্তব্য। এসব ঘটনায় ঘরে-বাইরে সব জায়গায় অবস্থান হারান তিনি।
এসব ঘটনায় সোমবার রাতে মুরাদকে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জানান, মঙ্গলবারের মধ্যেই তাকে পদত্যাগ করতে হবে।