পুঁজিবাজার নিয়ে যখন স্বতন্ত্র দুই নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতবিরোধ চূড়ান্ত, তারই মধ্যে দুই পক্ষ অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতীক্ষিত সেই বৈঠকে বসেছে।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকটি শুরু হয়।
গত বুধবার রাতে এই বৈঠকটি আহ্বান করা হয়। আর বৃহস্পতিবার সেই তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এই বৈঠক ডাকার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিজ্ঞপ্তিতে পুঁজিবাজারে উদ্বেগ তৈরি করলেও এই উদ্যোগের পর বাজার ঘুরে দাঁড়ায়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং শেয়ারবাজার কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি কমিটির আহ্বায়ক মফিজ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, এনবিআর, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মনোনীত প্রতিনিধিসহ অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা উপস্থিত আছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার উন্নয়নে ইতোপূর্বে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন অংশীজনদের কাছ থেকে যেসব প্রস্তাব এসেছিল, তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি কতদূর এগিয়েছে এবং অসম্পূর্ণ পদক্ষেপগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে; তার সমন্বয় ও তদারকিই বা কীভাবে করা যায় তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে আজকের এই বৈঠকে।
পুঁজিবাজার উন্নয়ন সম্পর্কিত কয়েকটি ইস্যুতে সৃষ্ট মতবিরোধের প্রেক্ষিতে আইনি দিকটির অধিকতর পর্যালোচনাও গুরুত্ব পাবে বলেও জানানো হয়েছে।
এই বৈঠক থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত বন্ডে ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটের (নির্ধারিত বিনিয়োগ সীমার) বাইরে রাখা না রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসে কিনা তা জানতে মুখিয়ে রয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
এই ‘এক্সপোজার লিমেট’ এর ‘গণনা পদ্ধতি’ নির্ধারণের বিষয়টি কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্যে বিবেচিত হবে, না ক্রয়মূল্যে হবে- তা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা আছে।
এছাড়া বিএসইসির উদ্যোগে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠনের ফলে তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন চায় বিনিয়োগকারীরা।
পুঞ্জিভূত লোকসান বিদ্যমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট বছরের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের বিষয়েও বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক পরস্পরবিরোধী অবস্থানে। বিএসইসি চায় পুঞ্জিভূত লোকসান থাকলেও কোনো একটি অর্থবছরে মুনাফা করলে লভ্যাংশ বিতরণের সুযোগ করে দিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটা পক্ষে নয়।
সব পক্ষের আলোচনা শুনে অর্থমন্ত্রণালয় পুঁজিবাজার উন্নয়ন সম্পর্কিত নতুন কিছু সিদ্ধান্তে আসতে পারে, যা বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা হতে পারে।
বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে পরবর্তীতে ভিন্নতর আঙ্গিকে সংশ্লিষ্ট সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উপস্থিতিতে জানানো হতে পারে। যা পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি বার্তা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
এর আগে লাগাতার দরপতনের প্রেক্ষাপটে করণীয় নির্ধারণে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের এনএসই ভবনে অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন।
চার ঘণ্টারও বেশি দীর্ঘ ওই বৈঠকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ও আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট সকল নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ, বাজার মধ্যস্থতাকারী, বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই অংশ নিয়েছিলেন।
ওই বৈঠকের পর গৃহীত নীতি সিদ্ধান্তগুলোর কোনোটির বাস্তবায়ন আদৌ হয়েছে কি-না, তা কেউ বলতে পারনেনি। তবে বৈঠকের কোনো প্রভাব পুঁজিবাজারে ছিল না। বরং লাগাতার দরপতন অব্যাহত ছিল পুঁজিবাজারে।
তবে আজকের এই বৈঠককে ঘিরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সকাল থেকেই পুঁজিবাজারে মূল্য সূচকের উত্থান দেখা দিয়েছে। বেড়েছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর।